৮ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডে মোটরসাইকেলে মিরপুর থেকে খিলক্ষেত

সকালে মিরপুরের নতুন রাস্তা ও কালশী উড়ালসড়কের উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধনের পরে শুরু হয় যান চলাচলছবি: আশরাফুল আলম

রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস থেকে মাটিকাটা ইসিবি চত্বর হয়ে খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ড এই পথের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। মোটরসাইকেলে করে এই পথ যেতে সময় লাগল ৮ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড। এ সময় মোটরসাইকেলের গতি ছিল ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার।

আজ রোববার সকালে মিরপুরের নতুন রাস্তা ও কালশী উড়ালসড়কের উদ্বোধন করা হয়েছে। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে উদ্বোধন ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা।

উদ্বোধনের পর আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থল থেকে চলে যান বেলা সোয়া ১২টার দিকে। এরপর যান চলাচলের জন্য সাড়ে ১২টার দিকে রাস্তা ও উড়ালসড়ক খুলে দেওয়া হয়।

দুপুর ১২টা ৩৩ মিনিটে মিরপুর ডিওএইচএস অংশ থেকে খিলক্ষেতের উদ্দেশে উড়ালসড়ক দিয়ে রওনা হন এই প্রতিবেদক। আর খিলক্ষেতে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছান ১২টা ৪১ মিনিটের দিকে। মিরপুর থেকে রওনা দেওয়ার আগে মুঠোফোনে স্টপওয়াচ চালু করে রাখা হয়েছিল। খিলক্ষেত পৌঁছে দেখা যায় স্টপওয়াচে সময় দেখাচ্ছে ৮ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড।

এর আগে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে মাটিকাটা এলাকার ইসিবি চত্বর পর্যন্ত যেতে সময় লেগেছিল ৫ মিনিট ১৮ সেকেন্ড। ইসিবি চত্বর এলাকায় মানুষের ভিড় আর বাসের কিছু জট থাকায় মোটরসাইকেলের গতি প্রতি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে নামিয়ে আনতে হয়।

এ সময় মিরপুর থেকে একজন রোগীর স্বজনদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আমান আলী। সময় কেমন লেগেছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খেয়াল করি নাই। তবে মনে হয় খুব বেশি হলে ১০-১২ মিনিট লেগেছে।’ উড়ালসড়কে মানুষ থাকায় সাবধানে এবং ধীরগতিতে চালাতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উড়ালসড়কে চলছে যানবাহন
ছবি: আশরাফুল আলম

উদ্বোধনের পর অনেকে পায়ে হেঁটে উড়ালসড়কে উঠছেন। তাঁদের কাউকে কাউকে ছবি বা সেলফি তুলতে, কাউকে আবার মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করতে দেখা গেছে। কিছু কিছু মোটরসাইকেলচালক উড়ালসড়ক দিয়ে বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাচ্ছিলেন।

উড়ালসড়কের ওপরে ছেলে সাইদ হোসেনকে নিয়ে এসেছেন আজমল হোসেন। তিনি বলেন, মিরপুর আগের চেয়ে অনেক পাল্টেছে। রাস্তা বড় হয়েছে, উড়ালসড়ক হয়েছে। যাতায়াত এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ। অথচ একসময় মিরপুরের এই বাউনিয়াবাঁধ, কালশী, মানিকদী, মাটিকাটা এসব এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন ছিল।

বেলা একটার দিকে কালশী মোড় এলাকায় যাত্রী নামাচ্ছিলেন প্রজাপতি পরিবহনের চালক হাসান মিয়া। তিনি বলেন, ‘আগে যেতে-আসতে, সব সময় কালশী মোড়ে জ্যাম পাইতাম। মোড়টা ছোট ছিল। বাস থামাইয়া যাত্রী নামাইলেই জ্যাম লাইগা যেত। আজকে ফ্লাইওভার দিয়া সোজা টান দিসি। কোনো জ্যাম পাই নাই।’

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনে করি, এই কালশী ফ্লাইওভার ঢাকাবাসীর জন্য বিশেষ করে মিরপুরবাসীর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বসন্তের বাসন্তী উপহার। একসময় মিরপুর ১২ নম্বর যেতে মানুষের ১২টা বেজে যেত। এখন মানুষের ১২ মিনিটও লাগবে না। কালশীতে আগে জলজট ও যানজট লেগে থাকত। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে জলজট ও যানজট থেকে মুক্তি পাবে ঢাকাবাসী। এর মাধ্যমে ঢাকা শহরের পূর্ব ও পশ্চিমের যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।’

আরও পড়ুন

‘ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ, উন্নয়ন ও কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ’ নামের প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। এর আওতায় কালশী থেকে মাটিকাটার ইসিবি চত্বরে যাওয়ার রাস্তাটি আগের চেয়ে প্রশস্ত হয়েছে। ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে উড়ালসড়ক।

প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার লম্বা সড়কটি চওড়ায় ১২২ ফুট। লেন রয়েছে আটটি। এর মধ্যে দুটি লেন অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা। এটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড।