নাচে–গানে–উচ্ছ্বাসে টাইনি টটস ও সামারফিল্ড স্কুলের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব
সবার গায়েই লালচে কমলা রঙের নির্দিষ্ট পোশাক। কেউ ছুটছে, কেউ ছোটাছুটি শেষে হাঁপিয়ে উঠেছে। একপাশে ছোট্ট শিশু শিক্ষার্থীরা ট্রামপোলিনে লাফালাফি করছে। আরেক দিকেও ট্রামপোলিনে ওঠার জন্য লম্বা লাইন ধরে অপেক্ষায় অনেকে। ফুল, ব্যানার, ফেস্টুন, রঙিন কাগজ আর শিক্ষার্থীদের নানা পরিবেশনায় মুখর আজ শুক্রবার, মুখর আর্মি স্টেডিয়াম।
টাইনি টটস ও সামারফিল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল তাদের গৌরবময় ৫০ বছর পার করছে। এ উপলক্ষে আজ শুক্রবার রাজধানীর বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে বিশেষ আনন্দ আয়োজন চলছে।
বেশ সকালেই মা–বাবার হাত ধরে শিক্ষার্থীরা স্টেডিয়াম মাঠে আসে। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে নির্দিষ্ট অংশ পাঠ করা হয়। এরপর মঞ্চ থেকে বেলুনের সঙ্গে বেঁধে স্কুলের সুবর্ণজয়ন্তীর ফেস্টুন ওড়ানো হয়। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক এবং বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আঞ্জুম হুসেইন।
এরপর একতা আর সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীরা হাজারো কণ্ঠে সমবেত সংগীত পরিবেশন করে। এখানেই শেষ নয়, এরপর বিভিন্ন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা এক এক করে নানা পরিবেশনায় অংশ নেয়।
মাঠের একপাশ রংবেরঙের ছোট ছোট কাগজের টুকরায় ছেয়ে ছিল। সেগুলো বেশ আনন্দ নিয়ে পকেটে পুরছিল ছোট্ট নুমায়রা। ওগুলো দিয়ে কী হবে জানতে চাইলে, ‘খেলবে’ জানিয়েই ছুট দেয় সে।
অন্য পাশে ছিল হরেক রকম খাবারের স্টল। সেখানেও ছিল ভিড়। শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল খেলনা গাড়ি, ট্রেনসহ নানা রকম রাইড। ছিল ম্যাজিক শোও।
নিজের ছেলেকে নিয়ে এসেছেন শ্রাবণী কুন্ডু। তিনি বলেন, যখন এ ধরনের মিলমনেলা হয়, তখন দুই ভিন্ন প্রজন্মের মানুষ এক হয়। একে অন্যকে জানার সুযোগ পায়। বড়দের কাছ থেকে শেখারও সুযোগ থাকে।
আরেক অভিভাবক জানান, তাঁর দুই ছেলেই এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে। এ ধরনের অনুষ্ঠান বিশেষ অনুভূতি দেয়। যেখানে ৫০ বছর ধরে শিক্ষা দিচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানে তাঁর ছেলেরা পড়ছে। এটা বিশেষ আনন্দের।
গতকাল থেকে শুরু হয়েছে ভাষার মাসের যাত্রা। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিশেষ একটি পরিবেশনা করে সামারফিল্ডের শিক্ষার্থীরা।
১৯৭৪ সালে স্কুলটির প্রতিষ্ঠা নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন অধ্যক্ষ আঞ্জুম হুসেইন। তিনি বলেন, পারিবারিকভাবেই শিক্ষাকে তাঁরা প্রাধান্য দিয়েছেন। শিক্ষা শুধু কিছু অর্জন করা নয় বরং একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যিনি সমাজে অবদান রাখবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি আনিসুল হক বলেন, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গৌরবের সঙ্গে ৫০ বছর ধরে শিক্ষা দিচ্ছে। এটা অনেক বড় ঘটনা। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্কৃতিচর্চার যে নিদর্শন তারা দেখিয়েছে, তা খুব ভালো লেগেছে।
দিনব্যপী এ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নানা পরিবেশনার পাশাপাশি শিক্ষকদের সম্মাননা দেওয়া হয়। বিকেলে রয়েছে স্কুল নিয়ে লেজার শো, তথ্যচিত্রসহ নানা আয়োজন। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা স্মৃতিচারণায় অংশ নেবেন। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর হবে কনসার্ট।
এ আয়োজনের সহযোগী হিসেবে রয়েছে প্রথম আলো, পাবলিকেশন পার্টনার হিসেবে রয়েছে প্রথমা প্রকাশন এবং ম্যাগাজিন পার্টনার হিসেবে রয়েছে কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা।