খামারবাড়ির চিত্র
গরুর মাংস ও ডিম শেষ সাড়ে তিন ঘণ্টায়
রোজার প্রথম দিনে ৩০টি স্থানে বিক্রি হয় ৫ হাজার কেজি গরু ও ১০০ কেজি খাসির মাংস।
এদিন ডিম বিক্রি হয়েছে ২০ হাজারটি ও দুধ ৩ হাজার লিটার।
রাজধানীর খামারবাড়িতে সুলভ মূল্যে মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রি শুরু হওয়ার কথা ছিল গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায়। ক্রেতাদের কেউ আসেন সকাল সাড়ে ৮টায়, কেউ ৯টায়। তবে সেখানে এসব পণ্য নিয়ে গাড়ি যেতে যেতে বেলা ১১টা পেরিয়ে যায়। ততক্ষণে অনেকেই রোদে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত। কেউ কেউ চলেও গেছেন। তবে তখনো ৫০ জনের বেশি ক্রেতা সারিতে দাঁড়িয়ে।
সবকিছু প্রস্তুত করে বেলা সোয়া ১১টার দিকে খামারবাড়িতে মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রি শুরু হয়। তখন থেকে এই পণ্য কেনার সারিতে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ভিড় ছিল। তারপর অবশ্য ভিড় কিছুটা কমে যায়। একই সঙ্গে পণ্যও ফুরিয়ে যায়। বেলা আড়াইটার দিকে গরুর মাংস ও ডিম শেষ হয়ে যায়। সাড়ে তিনটার দিকে শেষ হয় মুরগি ও খাসির মাংস এবং মাছ।
খামারবাড়িতে গতকাল ২১২ কেজি গরুর মাংস, ২ হাজার ৬০০টি ডিম, ২০০ কেজি ড্রেসড ব্রয়লার (চামড়া ছাড়া মুরগি), ২৮ কেজি খাসির মাংস এবং ২০০ লিটার দুধ বিক্রির জন্য নেওয়া হয়েছিল।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, রমজানের প্রথম দিনে রাজধানীর ৩০টি স্থানে ৫ হাজার কেজি গরুর মাংস, ১০০ কেজি খাসির মাংস, ১ হাজার ২০০ কেজি মুরগির মাংস, ২০ হাজারটি ডিম এবং ৩ হাজার লিটার দুধ বিক্রি করা হয়েছে। ১০ মার্চ কার্যক্রমটি শুরু হয়। তবে প্রথম দুই দিন এই কার্যক্রম ছিল সীমিত পর্যায়ে। গতকাল থেকে পুরোদমে শুরু হয়েছে।
সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রি করা হয় কিছু স্থায়ী দোকানেও। ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে গরুর মাংস ৬০০ টাকা এবং স্থায়ী দোকানে ৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে খাসির মাংস ৯০০ টাকা এবং ড্রেসড ব্রয়লার ২৫০ টাকা কেজি করে দাম রাখা হয়। দুধ ৮০ টাকা লিটার ও ১২টি ডিম ১১০ টাকা রাখা হয়। যেকোনো মাংস সর্বোচ্চ এক কেজি, দুধ দুই লিটার এবং ডিম সর্বোচ্চ ১২টি করে কেনা যাচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গতকাল ঢাকায় গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৩০-৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১০০০-১১০০ টাকা, ব্রয়লার (চামড়াসহ) ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং ডিম প্রতি ডজন ১২৬ থেকে ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
মাংস, দুধ, ডিম বিক্রির এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
সংস্থাটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোজার প্রথম দিনে আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি। আশা করি, সাধারণ মানুষকে এই উদ্যোগ কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।’
খামারবাড়ির ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে সকাল ৯টায় যান মো. আলী। কখনো রিকশা চালান, কখনো রাজমিস্ত্রির কাজ করেন এই তরুণ। তিনি দুপুর ১২টার দিকে এক কেজি গরুর মাংস হাতে পান। তিনি বলেন, ‘গরুর মাংস আমার খুব প্রিয়। বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকার মতো। এত টাকা দিয়ে আমাদের পক্ষে কেনা কষ্টের।’
খামারবাড়ির এই স্থানে বিক্রি কার্যক্রম একটু দেরিতে শুরু হওয়ায় অনেকেই বিরক্ত হয়েছেন। আবার দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হওয়ায়ও অনেকে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা দিলরুবা আক্তার বলেন, ‘সকাল ৯টায় লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুর ১২টায় কিনতে পারলাম। এতে যে টাকা সাশ্রয় হয়েছে, তার চেয়ে বেশি কষ্ট হয়ে গেছে।’
এদিকে খামারবাড়িতেই আরেকটি ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৪০ টাকা, পাঙাশ ১৩০, তেলাপিয়া ১৩০ ও পাবদা ৩৩০ টাকা কেজি বিক্রি করে মৎস্য অধিদপ্তর। এই একটি বিক্রয়কেন্দ্রে মোট ৩১১ কেজি মাছ আনা হয়।
মাংস, দুধ, ডিম ও মাছ সুলভে কিনতে পারছেন অল্প কিছু মানুষ। কিন্তু বাজারে দাম চড়া। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষকে চড়া দামেই কিনতে হচ্ছে মাংস ও মাছ। মিরপুরের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে দাম বাড়তেই থাকবে। আর সামান্য কিছু মাছ-মাংস কম দামে বিক্রি হবে, এটা লোকদেখানো উদ্যোগ। সরকারি সংস্থার উচিত সবার জন্য দাম কমাতে সচেষ্ট থাকা।