গুলশান লেকের জায়গা ভরাট, অভিযোগ তাঁতী লীগ নেতার বিরুদ্ধে

গুলশান লেকের জায়গা টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ভেতরে ময়লা-আবর্জনা ও ইট-কংক্রিটের টুকরা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর বনানীর কড়াইল বস্তির কুমিল্লাপট্টি অংশেছবি: দীপু মালাকার

পুরোনো ইট-কংক্রিটের টুকরা ও আবর্জনা ফেলে চলছে রাজধানীর গুলশান লেক ভরাটের কাজ। মাদ্রাসা নির্মাণের নামে এভাবে লেকের জায়গা দখলের পাঁয়তারা করছেন ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের বনানী থানার সভাপতি মমিন সরকার।

তাঁতী লীগ নেতার এ কাজে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড (বনানী, গুলশান) আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই মাদ্রাসার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছেন তিনি।

মমিন সরকার

রাজধানীর বনানীর কড়াইল বস্তির কুমিল্লাপট্টি অংশে চলছে লেকের পাড় ভরাটের এ কাজ। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, লেকের পাড় টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। সেখানে টানানো ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘কড়াইল আদর্শনগর কুমিল্লাপট্টি হাজি আমির হোসেন সরকার মাদ্রাসা। নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন মফিজুর রহমান (মফিজ), ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। সার্বিক সহযোগিতায় মমিন সরকার (সভাপতি বনানী থানা তাঁতী লীগ) ও এলাকাবাসী।’

ঘেরাও করা জায়গার ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো ইট-কংক্রিটের টুকরা ফেলা হয়েছে। কিছু সিমেন্টের বস্তায় ভরে রাখা হয়েছে। জায়গাটি ভরাট করতে ময়লা-আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে। বেড়ার ভেতরের অংশে এখনো লেকের খানিকটা দৃশ্যমান। সেখানে পানিতে বাঁশ পুঁতে বেড়া দিচ্ছেন দখলকারীরা।

কুমিল্লাপট্টিতে তাঁর অনেক বস্তিঘর আছে, যা ভাড়া দেওয়া। বস্তিতে এ নেতার একটি কার্যালয়ও রয়েছে। তবে তিনি থাকেন উত্তরা এলাকায়।

গুলশান সোসাইটি সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে লেকের ওই অংশের পাড়ে ময়লা-আবর্জনা ও ইট-কংক্রিটের টুকরা ফেলে ধীরে ধীরে ভরাট করা শুরু হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে আংশিক ভরাট হওয়া জায়গা টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়।

তবে গুলশান লেকের মহাখালী অংশে কড়াইল বস্তিকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই লেক দখল করা হচ্ছে। ওই অংশে বাঁশ পুঁতে মাচার মতো করে বস্তিঘর বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। কিছু অংশে দীর্ঘদিন বর্জ্য ফেলার পর আংশিক ভরাট হলে সেখানে রাতারাতি ঘর তুলে দখলে নিচ্ছেন বস্তির বাসিন্দারা।

মাদ্রাসা নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে মমিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ থেকে ১২ দিন আগে কাউন্সিলর মফিজুর রহমান মাদ্রাসার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করে গেছেন। এখন রাবিশ (ইট-কংক্রিটের টুকরা) ফেলা হচ্ছে। কিছুদিনের ভেতর নির্মাণকাজ পুরোদমে শুরু হবে।’

মমিন সরকারের দাবি, যেখানে মাদ্রাসা হচ্ছে, সেটি লেকের নয়, বস্তির জায়গা।

বনানীর কড়াইল বস্তির একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মমিন সরকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমানের ঘনিষ্ঠ লোক। বস্তির কুমিল্লাপট্টির নিয়ন্ত্রণও মমিন সরকারের হাতে। বস্তিতে তাঁর ব্যবসা মূলত অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাস–সংযোগের। এ ছাড়া কুমিল্লাপট্টিতে তাঁর অনেক বস্তিঘর আছে, যা ভাড়া দেওয়া। বস্তিতে এ নেতার একটি কার্যালয়ও রয়েছে। তবে তিনি থাকেন উত্তরা এলাকায়।

লেকের জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওটা আমি জানি না, কারা ভরাট করেছে। তবে এখানে কিছু ঘর আছে, বলল যে এগুলো তারা মাদ্রাসার নামে দিয়ে দেবে।’

দীর্ঘদিন ধরে সবার চোখের সামনে গুলশান লেকের কড়াইল বস্তি অংশে লেক দখল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গুলশান সোসাইটির সভাপতি ওমর সাদাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গুলশান লেকের পাড়ে হাঁটার রাস্তা (ওয়াকওয়ে) নির্মাণে আদালতের নির্দেশ থাকলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কাজটি করছে না। ফলে মহাখালী অংশে লেকটি ক্রমান্বয়ে দখল ও সংকুচিত হচ্ছে।

ওটা আমি জানি না, কারা ভরাট করেছে। তবে এখানে কিছু ঘর আছে, বলল যে এগুলো তারা মাদ্রাসার নামে দিয়ে দেবে।
কাউন্সিলর মফিজুর রহমান

রাজউক কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে জানিয়ে ওমর সাদাত আরও বলেন, ‘আশা করি, রাজউক অবিলম্বে লেক দখল বন্ধে ব্যবস্থা নেবে। তবে খুচরা পদক্ষেপ না নিয়ে স্থায়ীভাবে লেকের পাড়ে হাঁটার রাস্তা করে লেক দখল বন্ধ করতে হবে।’

জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গুলশান লেক ভরাটের বিষয়টি তাঁরা জেনেছেন। তাঁরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবেন।