শীত নয়, এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম শুরু

রাজধানীর মহাখালীতে আজ ‘বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা পর্যবেক্ষণ বিষয়ক প্রচার’ সেমিনারের আয়োজন করা হয়ছবি: সংগৃহীত

অনেকেই ধরে নেন ইনফ্লুয়েঞ্জা (শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ) বা ফ্লু হয় শীতকালে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ফ্লু হয় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে। এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি থাকে জুন ও জুলাই মাসে। ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমে ছয় গুণ বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আইসিডিডিআর,বি’র যৌথ পর্যবেক্ষণে এসব কথা জানানো হয়েছে।

আজ বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে ‘বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা পর্যবেক্ষণ বিষয়ক প্রচার’ সেমিনার আয়োজিত হয়। আইইডিসিআর ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে জানানো হয় যে আইইডিসিআরের ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতীয় ইনফ্লুয়েঞ্জা সেন্টার (এনআইসি) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর আওতায় আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবি জাতীয় ইনফ্লুয়েঞ্জা নজরদারি ও হাসপাতালভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে দেশের ১৯টি হাসপাতালে তাদের পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম চলছে।

তাদের কার্যক্রমের ২০০৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তথ্য–উপাত্ত তুলে ধরেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন। তিনি বলেন, ২০০৭ সালের মে থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ নিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৮০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে ১১ দশমিক ৫ শতাংশের ইনফ্লুয়েঞ্জা শনাক্ত হয়। ৫ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা ইনফ্লুয়েঞ্জায় বেশি আক্রান্ত হন। ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে মারা যাওয়ার হার ১ শতাংশ।

অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন আরও জানান যে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি এবং ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ ও ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি তিন গুণ বেশি।

ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমে প্রতি ৪ জন শ্বাসতন্ত্রের রোগীর ১ জন ইনফ্লুয়েঞ্জা পজিটিভ হয়, যা অন্য সময়ে ২৫ জনে ১ জন। ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে সুরক্ষা পেতে টিকা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দেওয়া হয়। দেশে যেহেতু এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম, তাই ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের মধ্যেই টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ করে ৬০ বছরের বেশি, ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু, গর্ভবতী নারী এবং যাঁরা হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগেন, তাঁদের টিকা নেওয়ার কথা বলা হয়।

সেমিনারে ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ হিসেবে বলা হয়, জ্বর, কাশি, মাথাব্যথা, পেশি ও জয়েন্টে ব্যথা, খারাপ লাগা বোধ করা, গলাব্যথা ও নাক দিয়ে সর্দি ঝরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উন্নয়ন পরিকল্পনা শাখার অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সেমিনারে অংশ নিয়ে বলেন, গণহারে টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টিকা নিতে হবে। তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে হাত ধোয়া, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর বেশি গুরুত্ব দেন তিনি।

আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ বলেন, এই ফ্লুকে অনেকেই অবহেলা করেন। কিন্তু এটাতে মানুষ মারাও যাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য টিকা নেওয়ার পাশাপাশি সুলভ মূল্যে টিকার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে ইনফ্লুয়েঞ্জার বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উপস্থাপনা তুলে ধরেন আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী ফাহমিদা চৌধুরী। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান, সিডিসির এপিডেমিওলজিস্ট গ্রেচেন কাওম্যান প্রমুখ।