পার্বত্য চুক্তির বিরোধী শক্তি সরকারের মধ্যে রয়েছে: মেনন

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন রাশেদ খান মেনন
ছবি: প্রথম আলো

পার্বত্য চুক্তি দেশের বড় অর্জন ছিল। এত দিনেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় সেই চুক্তির মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম অনেক জটিল ও কঠিন হয়ে গেছে। যারা চুক্তিবিরোধী শক্তি, সেই শক্তি সরকারের মধ্যে যারা রয়েছে, সরকারের বাইরে যারা রয়েছে, তারা জনসংহতি সমিতির মধ্য দিয়ে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তা ভেঙে দিয়েছে। এখন একটা–দুইটা নয়, বহু গোষ্ঠী সেখানে সক্রিয়।

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন রাশেদ খান মেনন। আজ বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের একদিকে মিয়ানমার, একদিকে মিজোরাম, একদিকে মণিপুর—এসব অঞ্চল অশান্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশকে নিজের নিরাপত্তার জন্য, নিজের ভূখণ্ডের অখণ্ডতার জন্য এবং দেশের জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার জন্য পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন অতীব জরুরি।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। না হলে আশঙ্কা করছি, অঘটনই ঘটবে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার উৎপত্তি সংবিধান থেকে বলে মনে করেন ঐক্য ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম এ সবুর। তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকারের আইন অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ অঞ্চল। সেখানে অন্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে না। বাইরের কোনো লোক সেখানকার সম্পত্তি অর্জন করতে পারবে না। ঔপনিবেশিক সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে যে অধিকার দিয়ে গেছে, সেই অধিকারও রক্ষা করেনি স্বাধীনতার পর আসা সরকারগুলো। তারপরও যে পার্বত্য চুক্তি হলো, সেটা বাস্তবায়ন না করার কারণে তারা যে আবার হাতে অস্ত্র তুলে নেবে না, তার নিশ্চয়তা নেই বলেও মনে করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, দেশে যদি পার্বত্য চুক্তিকে ভুলে যাওয়া একটি চুক্তিতে পরিণত করতে চায় রাষ্ট্র, তাহলে তার ফল মারাত্মক হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ধীরে ধীরে ১৯৯৭ সাল পূর্ববর্তী অবস্থার দিকে এগোচ্ছে।

মেজবাহ কামাল আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করে রাষ্ট্র, সরকার ও আওয়ামী যে পিছু হটছে, এটা দেশের জন্য ভয়াবহ অশনিসংকেত। এ চুক্তি বাস্তবায়নে সব দলকে এগিয়ে আসতে হবে।

দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়ক অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।

আজকের অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক সব দলের প্রতি পাঁচটি দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। সেগুলো হলো, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী–সম্পর্কিত নীতি ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দাবি গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত করা; পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি আন্দোলনের পক্ষে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ঘোষণা করা; রাজনৈতিক দল ও সহযোগী সংগঠনে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিষয়ে মুখপাত্র ও সম্পাদকীয় পদ তৈরি করা এবং জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় সরকার পরিষদের সব স্তরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দলীয় মনোনয়ন দেওয়া।