ঢাবি ক্যাম্পাসে সতর্ক ছাত্রলীগ, চলছে মিছিল-সাংস্কৃতিক আয়োজন-ক্রিকেট
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় অবস্থান করছেন। চলছে মিছিল, সেখানে দেওয়া হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্রদল-শিবিরবিরোধী নানা স্লোগান। মোটরসাইকেলের মহড়াও দিচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। অবস্থান ও মহড়ার পাশাপাশি ‘সচেতন শিক্ষার্থী’দের ব্যানারে আজ শনিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) রাজু ভাস্কর্যে থাকছে সাংস্কৃতিক আয়োজন। টিএসসির সামনে ক্রিকেট খেলায়ও ব্যস্ত কেউ কেউ।
বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় বিএনপি কিংবা ছাত্রদলের যেকোনো ধরনের তৎপরতা রুখতেই ছাত্রলীগ এ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একে বলা হচ্ছে ‘শান্তির স্বপক্ষে লড়াই’। বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে সতর্ক অবস্থান শুরু করেছে ছাত্রলীগ। আজ রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে চলছে বিএনপির গণসমাবেশ।
বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিএসসি, মধুর ক্যানটিন, নীলক্ষেত, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, কার্জন হল, হাইকোর্ট মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ছাত্রদল ও বিএনপির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিচ্ছেন। কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে মিছিলও হচ্ছে ক্যাম্পাসে। বিভিন্ন হল শাখার নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসজুড়ে মোটরসাইকেলের শোডাউনও দিচ্ছেন। নেতা-কর্মীদের একটি অংশ টিএসসির সামনে ক্রিকেট খেলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। তবে ক্যাম্পাসের অন্য এলাকাগুলো আজ ফাঁকা। এর কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা গতকাল শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত আর্জেন্টিনার খেলা দেখা ও আতঙ্কের কথা বলছেন।
এদিকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে চলছে ‘বিজয় মঞ্চ: সন্ত্রাস রুখতে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক আয়োজনের প্রস্তুতি। এ আয়োজনে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত থাকছে প্রতিবাদী গান, নৃত্য, আবৃত্তি, মঞ্চনাটক, মূকাভিনয়, বিতর্কসহ নানা পরিবেশনা। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ‘সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে আজকের সাংস্কৃতিক আয়োজনটি করছেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টিএসসিভিত্তিক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের এক বৈঠকের পর এই আয়োজনের ঘোষণা আসে।
সন্ত্রাসী ছাত্রদের পলিটিক্যাল ফ্রন্ট ছাত্রদল, ঘাতকদের পলিটিক্যাল ফ্রন্ট
এসব তৎপরতা ও আয়োজনকে ‘শান্তির স্বপক্ষে লড়াই’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্ত্রাসী ছাত্রদের পলিটিক্যাল ফ্রন্ট হচ্ছে ছাত্রদল আর ঘাতকদের পলিটিক্যাল ফ্রন্ট হচ্ছে বিএনপি। ইতিমধ্যেই দেশব্যাপী তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছে। তাদের তিন বছরব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাসের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। তাদের ককটেলবাজি ও বোমাবাজির শিকার হয়ে অনেক শিক্ষার্থী এখনো দুর্বিষহ যন্ত্রণা ভোগ করছেন। এবারও তাদের সেই অপচেষ্টা রয়েছে বলে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করা তাদের মূল লক্ষ্য। দেশরত্ন শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাষ্ট্র পরিচালনার কারণে ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসমুক্ত রেখে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ সমুন্নত রাখতে পেরেছি। আজ সেটি বিঘ্নিত হওয়ার একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সে জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। শান্তির স্বপক্ষে এ লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলার মাটি থেকে এসব সন্ত্রাসীর মূলোৎপাটন করতে হবে।’
তবে যাঁদের ঘিরে ছাত্রলীগের এত সব আয়োজন, সেই ছাত্রদল আজ ক্যাম্পাস এলাকায় আসছে না বলে জানা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির গণসমাবেশে অংশ নিচ্ছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া অনেকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আজ ক্যাম্পাসে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই ছাত্রদলের।