আমি বললাম, আমার চোখ বাঁধেন কেন, এরপর শুরু কিল-ঘুষি

মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী মো. মহিউদ্দিন খান। পথে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাঁকে একটি গাড়িতে তোলেন কয়েকজন। এরপর চোখ বেঁধে চলে মারধর। একপর্যায়ে টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে ফেলে দেওয়া হয় রাস্তার পাশে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সামনের রাস্তায় গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার বর্ণনা প্রথম আলোর কাছে তুলে ধরেছেন মহিউদ্দিন খান। বিষয়টি শাহবাগ থানা–পুলিশকে জানিয়েছে তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

মহিউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর নিউমার্কেটে রায়হান জুয়েলার্স নামে তাঁর একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। শনিবার বেলা একটার দিকে তিনি বাসা থেকে তাঁতীবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। দুইটার দিকে তাঁতীবাজার ২১ নম্বর মার্কেটে পৌঁছান। কাজ শেষে বেলা তিনটার দিকে তাঁতীবাজার মোড় থেকে ভাড়া করা মোটরসাইকেলে করে নিউমার্কেটের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের মূল ফটক থেকে ২০ গজ পূর্বে পাকা রাস্তার ওপর পৌঁছান মহিউদ্দিন। সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে ‘সেনাবাহিনী’ লেখা জলপাই রঙের একটি গাড়ি এসে মোটরসাইকেলের পথরোধ করে। তিনজন ওই গাড়ি থেকে নেমে তাঁকে মোটরসাইকেল থেকে নামতে বলেন। তাঁদের প্রশাসনের লোক ভেবে মহিউদ্দিন মোটরসাইকেল থেকে নেমে যান।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের মূল ফটক থেকে ২০ গজ পূর্বে পাকা রাস্তার ওপর পৌঁছান মহিউদ্দিন। সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে ‘সেনাবাহিনী’ লেখা জলপাই রঙের একটি গাড়ি এসে মোটরসাইকেলের পথরোধ করে। তিনজন ওই গাড়ি থেকে নেমে তাঁকে মোটরসাইকেল থেকে নামতে বলেন।

মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘মোটরসাইকেল থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকান তিনজন। তারপর গাড়িতে তুলে গামছা দিয়ে আমার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। গাড়িতে তোলার সময় আমি চালক ও পেছনে বসা আরও একজনকে দেখতে পাই। তাঁদের জিজ্ঞাসা করি, আমার চোখ বাঁধেন কেন, ভাই? তখন তাঁরা উত্তেজিত হয়ে আমাকে চুপ থাকতে বলেন এবং চোখে-মুখে কিল–ঘুষি মারতে থাকেন।’

ঘটনার একপর্যায়ে মহিউদ্দিন বুঝতে পারেন, তিনি ডাকাতের কবলে পড়েছেন। বলেন, ‘কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ওই লোকেরা আমাকে মারধর করছিলেন। গাড়ি কিছুদূর যাওয়ার পর তাঁরা আমার দুই হাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ (হাতকড়া) পরিয়ে দেন। এ ছাড়া আমি যাতে চিৎকার করতে না পারি, সেজন্য মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলেন।’

ডাকাতেরা তাঁর কাছে থেকে মোট ২০ লাখ টাকা ও একটি মুঠোফোন নিয়ে গেছেন বলে দাবি করেছেন এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘আমার দুই পায়ে রাবার দিয়ে বাঁধা ২ লাখ টাকা করে মোট ৪ লাখ টাকা ও কোমরে কাপড়ের বেল্টে রাখা আরও ১৬ লাখ টাকা নিয়ে নেন ডাকাতেরা। আমার ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও তাঁরা ছিনিয়ে নেন। পরে হাত, পা ও চোখ বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে দেন।’

কীভাবে তাঁকে রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করা হলো, তার বর্ণনা দিয়েছেন মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, রাস্তার পাশে কয়েকজন তাঁর গোঙানির শব্দ শুনে বাঁধন খুলে দেন।

তাঁদের কাছ থেকে জানতে পারেন, তিনি কেরানীগঞ্জে আব্দুল্লাহপুরের রাস্তার পাশে রয়েছেন। পরে তাঁদের সহায়তায় বিষয়টি তাঁর ভাই কবির হোসেনকে জানানো হয়।
মহিউদ্দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছেন। ডাকাতদের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ডাকাতদের বয়স আনুমানিক ২৮-৩২ বছর। উচ্চতা আনুমানিক ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। গায়ের রং শ্যামলা। মাথার চুল ছোট করে কাটা। পরনে ছিল প্যান্ট, হাফহাতা গেঞ্জি ও হাফহাতা কোটি। ডাকাতেরা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন। তাঁদের দেখলে আমি চিনতে পারব।’

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদুত হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাইয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে এ ঘটনায় মামলা নেওয়া হবে।’