মিরপুরে দেড় ঘণ্টা দেরিতে উচ্ছেদ অভিযান, তিনটি টংদোকান ভেঙে তিন দিনের বিরতি

রাজধানীর মিরপুরের কালশী স্টিল ব্রিজ–সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকায় অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়ছবি: প্রথম আলো

অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদের পূর্বঘোষিত অভিযানটি দেড় ঘণ্টা দেরিতে শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। আধঘণ্টা চালানো অভিযানে তিনটি টংদোকান ও কিছু ভাঙারির দোকানের আংশিক ভেঙে দেওয়া হয়। এরপরই অবৈধ দখলদারদের মালপত্র সরিয়ে নিতে তিন দিনের সময় দিয়ে অভিযান স্থগিত করে দেন ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরের কালশী স্টিল ব্রিজ–সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকায় অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদে চালানো অভিযানে এমন ঘটনা ঘটে।

অভিযানটি সকাল ১০টায় শুরু করার কথা ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুরু করা অভিযানটি দুপুর ১২টা ৭ মিনিটের মধ্যেই শেষ করে দেওয়া হয়। অভিযানে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের থাকার কথা থাকলেও অভিযানে তিনি ছিলেন না।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগের পাঠানো ‘মিডিয়া কাভারেজের অনুরোধে’ বলা হয়, কালশী স্টিল ব্রিজ–সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকায় আজ সকাল ১০টায় ‘অবৈধ দোকান/স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান’ চালানো হবে। এতে উপস্থিত থাকবেন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।

আজ সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে কালশী স্টিল ব্রিজ এলাকায় গিয়ে ঢাকা উত্তর সিটির কোনো কর্মকর্তা, কর্মী কিংবা উচ্ছেদের কাজে ব্যবহারের জন্য কোনো যানবাহন এনে রাখতে দেখা যায়নি। ১০টা ১৭ মিনিটে দায়িত্বপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারজানা ববির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কাছাকাছি আছেন বলে জানান এবং কয়েক মিনিট পর সেখানে উপস্থিত হন।

এরপর অভিযানের বিষয়ে খোঁজ নিতে ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-২–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের মুঠোফোনে ১০টা ১৯ মিনিট থেকে ১০টা ২০ মিনিটের মধ্যে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। দেরির বিষয়ে জানতে চাইলে জনসংযোগ বিভাগের কর্মীরা জানান, অভিযানের জন্য পুলিশ ফোর্স সময়মতো না পাওয়ায় কর্মকর্তাদের আসতে দেরি হচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুরের কালশী স্টিল ব্রিজ–সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকায় অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়
ছবি: প্রথম আলো

পরে বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-২–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফারজানা খানমসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছান। তাঁদের উপস্থিতিতে বেলা ১১টা ২৪ মিনিটের দিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়।

শুরুতেই টিনের বেড়া ও ছাউনির ছোট একটি টংদোকান ভাঙা হয়। ভাঙার সময় দোকানটি বন্ধ ছিল। এরপর চা-পান-সিগারেটসহ বিভিন্ন কোমল পানীয় বিক্রির আরেকটি টিনের টংদোকান ভাঙা হয়। এর আগে দোকান থেকে রেফ্রিজারেটরসহ অন্য মালপত্র সরিয়ে নিতে দোকানিকে কিছুক্ষণ সময় দেওয়া হয়। এরপরই ভাঙা দ্বিতীয় দোকানের বিপরীত পাশের আরেকটি টংদোকান ভাঙা হয়।

তৃতীয় ওই দোকান ঘেঁষেই বাইতুল জান্নাত মাদানী জামে মসজিদ কমিটি তাদের নূরে মদিনা মাদ্রাসার কার্যালয় করতে ইটের দেয়াল গেঁথে একটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছিল। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অবৈধ সেই স্থাপনা ভাঙার নির্দেশ দেন। তখন মসজিদ কমিটির সদস্য ও স্থানীয় মুসল্লিরা ওই স্থাপনা ভাঙতে বাধা দেন এবং নিজেরাই ভেঙে ফেলবেন বলে ঘোষণা দেন।

মসজিদ কমিটির সদস্য আইয়ুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা অর্থনৈতিক কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য ওই স্থাপনা নির্মাণ করছেন না। ওই স্থাপনা যে সড়কের জায়গায়, সেটা তাঁরাও জানেন। করপোরেশন চাইলে নিজেরাই ভেঙে ফেলবেন। অভিযানের একপর্যায়ে স্থানীয় মুসল্লিরা ওই স্থাপনার আংশিক কাঠামো ভেঙে ফেলেন।

এ সময় বেড়িবাঁধ এলাকার রাস্তার দুই পাশের অবৈধ দোকানমালিকদেরও উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দিতে দেখা গেছে। তাঁরা বলছিলেন, তাঁদের আগে থেকে জানানো হলে তাঁরা নিজেরাই এসব স্থাপনা সরিয়ে নিতেন। কিন্তু করপোরেশন যেটা করছে, সেটা গরিবের পেটে লাথি মারা হচ্ছে। তাই তাঁরা অভিযান চালাতে বাধা দেন।

এর কিছুক্ষণ পর বেলা ১১টা ৪৯ মিনিটের দিকে অভিযানে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা একসঙ্গে বাঁশি বাজাতে বাজাতে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকা স্থানীয় লোকজনকে সরিয়ে দেন। এরপর আরও একটি টিনের ছাউনির ঘরের আংশিক ভেঙে দেওয়া হয়।

একপর্যায়ে হ্যান্ডমাইকে করে ঢাকা উত্তর সিটির এক কর্মীকে অভিযান স্থগিতের বিষয়ে ঘোষণা দিতে দেখা যায়। ওই কর্মী বলছিলেন, ‘আপনারা যাঁরা রাস্তা দখল করে রেখেছেন, তাঁদের তিন দিন সময় দেওয়া হয়েছে। আপনারা নিজ নিজ দায়িত্বে মালামাল সরিয়ে ফেলুন। অন্যথায় সিটি করপোরেশনের আদেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’ এ সময় ওই কর্মীর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ফারজানা খানম।