নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্ব না দিলে আমাদের মুখোমুখি হতে হবে: ইকবাল হাবিব

সারা দেশে খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণের দাবিতে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েসের সমাবেশ। আজ সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

তরুণদের অধিকার, বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিত করতে উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, পার্ক এবং পরিবেশকে সনদে জায়গা দিতে হবে। যেন আগামী নির্বাচিত সরকার বা যারা নির্বাচন করবে, তাদের প্রত্যেকের ইশতেহারে যেন এটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে থাকে। আর তা যদি না হয়, নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি দলকে আমাদের মুখোমুখি হতে হবে।

আজ মঙ্গলবার সকালে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েস আয়োজিত সমাবেশে নগরবিদ ও পরিবেশবাদী ইকবাল হাবিব এ কথা বলেন। সারা দেশের খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণে ‘পদযাত্রা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান’ শীর্ষক সমাবেশটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ১৯টি সংগঠন এতে অংশ নেয়।

স্মারকলিপি প্রদান প্রসঙ্গে ইকবাল হাবিব বলেন, ‘আমরা সংস্কারের নামে আলোচনা দেখি, সমঝোতা দেখি, সনদ দেখি। কিন্তু এই সংস্কার আর সনদের সব কর্মকাণ্ডের মধ্যে পরিবেশ, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানের কোনো স্থান হলো না। যে যুবক, যে তারুণ্যের হাত ধরে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, সেই তারুণ্যকে প্রহসনের মধ্য ঠেলে দেওয়ার এই অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানানোর জন্য এবং এই নতুন সনদ বা বন্দোবস্তের মধ্যে পরিবেশ, মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, পার্ককে যুক্ত করার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ সমঝোতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আজকে এই স্মারকলিপি দেওয়ার আয়োজন।’

নারী ফুটবল দল একের পর এক সম্মানের মুকুট আনলেও নগরগুলোতে তাদের খেলার জন্য এক ইঞ্চি জায়গা নেই উল্লেখ করে এই স্থপতি বলেন, এসব ভয়াবহ অসংগতি, ভয়াবহ বৈষম্য। সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই অন্তর্ভুক্তিতার লড়াই, অন্তর্ভুক্তিতার সংগ্রাম। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সনদ, সংস্কার, বন্দোবস্তের গল্প বলা হচ্ছে। আজকের এই স্মারকলিপিকে আমলে নিয়ে সব দল, মত, প্রধান উপদেষ্টা যেন সনদে স্বাক্ষর করেন। সেটা না হলে তরুণ সম্প্রদায়কে এভাবে খেলাচ্ছলে প্রতারণা ও প্রহসনের চেষ্টা যেন না করা হয়।

সরকার আইন বানিয়ে নিজেরাই ভঙ্গ করে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি (বাপা) অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার। তিনি প্রশ্ন করেন, সরকারি হাউজ বিল্ডিংয়ের কোনো ক্যাম্পাসে কি খেলার মাঠ আছে? যেভাবে মানুষ বেড়েছে, ঠিক সেই হারে খেলার মাঠ কমেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। মাঠ শুধু খেলোয়াড়দের জন্যই দরকার নয়, মাঠের পাশে পার্ক প্রবীণদের অবকাশ বা বিশ্রামের জন্যও দরকার। সরকার বদল হলে শুধু সাইনবোর্ড বদলানো নয়, সবাই কাজ দেখারও আশা করে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সম্মিলিতভাবে মোট ৫৪টি নিবন্ধিত পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান রক্ষণাবেক্ষণ করে। এগুলো ৩০৫ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। অর্থাৎ প্রতি ১০০০ জন নগরবাসীর জন্য মাত্র শূন্য দশমিক ০২ একর উন্মুক্ত স্থান রয়েছে। যা ঢাকা সিটি করপোরেশনের মোট এলাকার মাত্র শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ। এই উন্মুক্ত স্থানগুলোর একটি বড় অংশ অননুমোদিত ও অবৈধ ব্যবহারের কারণে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, দেশে তথাকথিত উন্নয়নের নামে খালি টাকা কামাইটা প্রধান হয়ে গেছে। ফাঁকা জায়গা মানে জনগণের জায়গা। এসব রক্ষা করার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন না করার কারণে সেগুলো দখলদারি বা মাদকের আখড়ায় রূপান্তরিত হয়। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে উন্মুক্ত জায়গা সাধারণ মানুষের জন্য, বিশেষ করে তরুণদের জন্য খেলার মাঠের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

সারা দেশে খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণের দাবিতে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েসের সমাবেশ। আজ সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

সভাপতির বক্তব্যে গ্রিন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির বলেন, ‘স্বাধীনতার এত বছর পর, ছাত্র অভ্যুত্থানের এক বছর পরও মাঠ রক্ষার জন্য আমাদের অবস্থান করতে হবে, ভাবি নাই। ভূমিদস্যুদের লোলুপদৃষ্টি এসব মাঠ, খোলা জায়গার ওপরে।’

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা দাবিগুলো তিনি পাঠ করেন। এর মধ্যে বিদ্যমান এবং সম্ভাব্য খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানগুলোর একটি বিশদ স্থানিক নিরীক্ষা পরিচালনা করা এবং তদনুযায়ী তালিকা তৈরি করা; অবৈধভাবে দখল করা খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান উদ্ধার করা এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে যৌথ পরিচালন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা; খেলার মাঠ ও পার্ক সুরক্ষা করার পাশাপাশি তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও ‘আন্তসবুজ সংযোগ’ স্থাপন করা; স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে অব্যবহৃত সরকারি বা ব্যক্তিগত জমি এবং স্কুল-কলেজের মাঠগুলোর বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিত করা; স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ অব্যবহৃত থাকলে সে সময় বা ক্লাসের পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা; পদচারীবান্ধব সবুজ করিডর স্থাপনের মাধ্যমে পার্ক, লেক এবং সাংস্কৃতিক উন্মুক্ত স্থানগুলোকে সংযুক্তকরণ; তেঁতুলতলা মাঠকে স্থায়ীভাবে খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান হিসেবে সংরক্ষণ উল্লেখযোগ্য।

গ্রিন ভয়েসের সহসমন্বয়ক হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

বক্তৃতা শেষে পদযাত্রাটি প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করে। তারা শাহবাগে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। জাদুঘরের সামনে এই আয়োজন শেষ করা হয়। দুপুর ১২টার পর গ্রিন ভয়েসের পক্ষ থেকে পাঁচজন প্রতিনিধি উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিতে যমুনায় যান।

আগামীকাল থেকে বিভাগীয় কমিশনারসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বরাবর একই স্মারকলিপি দেওয়া হবে। আগামী ১৫ দিন সারা দেশে এই কার্যক্রম চলবে। পাশাপাশি ওসমানী উদ্যান, আনোয়ারা উদ্যান, পান্থকুঞ্জ পার্কসহ দখল হওয়া মাঠ রক্ষায় বিভিন্ন সমাবেশের আয়োজন করা হবে।