পাঠকের চাহিদা না জেনেই বই যায় পাঠাগারে

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আলোচনা সভার আয়োজন করে। জাতীয় জাদুঘর, ঢাকাছবি: প্রথম আলো

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম বলেন, বিগত বছরগুলোয় কখনো পাঠকের কাছে জানতে চাওয়া হয়নি তাঁরা কোন ধরনের বই পড়তে চান। এখান থেকে তালিকা করে বই কিনে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু এখন পাঠকদের কাছ থেকে বইয়ের চাহিদাপত্র চাওয়া হবে। পাশাপাশি পাঠাগার সমৃদ্ধ করার কাজে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করা হবে।

আজ বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সমৃদ্ধ হোক গ্রন্থাগার, এই আমাদের অঙ্গীকার’।

আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরু হয় ‘জুলাই অনির্বাণ’ তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন মাঠপর্যায়ের কাজে নেমে দেখতে হবে কোথায় কোথায় সংস্কার দরকার, পরিবর্তন দরকার। মানুষকে বই পড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’

এ সময় তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহত কিশোর-তরুণদের অবদানের কথা। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ প্রজন্ম, কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম সফল।’

অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনীষ চাকমা বলেন, চার দশক আগে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা হলেও উল্লেখযোগ্য কিছু করা হয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না। এখন প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে পাঠাভ্যাস করানো।

অনুষ্ঠানে ‘সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার বিনির্মাণে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. সাইফুল আলম। তিনি বলেন, একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার মানে শুধু বই আছে, তা নয়। এখানকার বই, জার্নাল যা আছে সব কটির তালিকা ডিজিটাল উপায়ে সাজাতে হবে, যাতে পাঠক সহজেই সেটি খুঁজে পায়।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষা খাতে বাজেট অন্তত ৪ শতাংশ করার পরিকল্পনা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারিনি। যা ছিল তা–ও হারিয়ে ফেলেছি।’

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নাফরিজা শ্যামা। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) মফিদুর রহমান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলী।

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত হয়েছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। বই পড়া, রচনা লেখা, চিত্রাঙ্কনসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননা তুলে দেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ অন্য অতিথিরা।

১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৫৮ সালের ২২ মার্চ ১০ হাজার ৪০টি বই নিয়ে শুরু হয় গণগ্রন্থাগারের যাত্রা। ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ উদ্‌যাপন করা হচ্ছে।