বড় দুই দল লাভের জন্য উগ্রবাদীদের বিকশিত হতে দিয়েছে: ইফতেখারুজ্জামান

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা বিচ্ছিন্ন বা নতুন কোনো ঘটনা নয়। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর যে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, তা কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। অনুষ্ঠানের আয়োজকদের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। এরপরও কেন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না?

দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক বলেন, ঘটনাগুলো ক্রমাগত ঘটছে। শুধু এ সম্প্রদায় নয়, সব সংখ্যালঘুরাই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইফতেখারুজ্জামান। হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক তোষণের কারণে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাগুলো ঘটছে বলে উল্লেখ করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে দুটি বৃহৎ দল এই ধরনের ধর্মান্ধ ও উগ্রবাদীদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে নিজেদের স্বল্পমেয়াদে লাভের জন্য। কিন্তু এতে দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্র কাঠামোতে তারা ফ্রাংকেস্টাইন তৈরি করছে। তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সাম্মানিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, শুধু শারীরিক হামলাই হয়নি, অনলাইনে ঘটনার আগে উসকানি ও ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ প্রসঙ্গে এই আইনজীবী বলেন, ‘সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মীসহ অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সামান্য পোস্ট দেওয়া, লাইক করা, কার্টুন শেয়ার করা হলে মামলা হচ্ছে। কিন্তু এখানে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের নানা প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ দেখা যায় না, আমরা বলছি না আইনের প্রয়োগ চাইছি, কিন্তু কেন সিলেক্টিভলি আইনটি ব্যবহার করা হয়।’

অনলাইনে বিদ্বেষমূলক ব্যবস্থার জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তা জানার দাবি জানান সারা হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আহমদিয়া সম্প্রদায় শেষ পর্যন্ত তাদের জলসা করতে পারেনি, নিজেদের অধিকার তারা প্রয়োগ করতে পারেনি। ২০ বছর ধরে প্রায় প্রতিবছর সব সরকারের আমলেই এ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে, কিন্তু বিচার দেখা যায়নি। বিচারপ্রক্রিয়া সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। সরকারের কাছে তারা আবেদন জানায়, যাতে আর একটি ঘটনাও না ঘটে এবং বিচার নিশ্চিত করা হয়।

আসকের নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, আক্রমণ বন্ধ করার চেয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করে আইনানুগ যে সমাবেশ সেটা বন্ধ করতে হবে। সুন্দরবন থেকে পঞ্চগড় গত ২০ বছরে অনেক ঘটনা ঘটেছে। আহমদিয়াদের ওপর যত হামলা হয়েছে, তার কোনো বিচার দেখা যায়নি। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে, তাতে শক্ত বার্তা যাচ্ছে যে এ ধরনের ঘটনায় কিছুই হবে না।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের শাহীন আনাম বলেন, পরিকল্পিতভাবে এগুলো করা হয়। সাম্প্রদায়িক মনোভাব রোধে গোড়া থেকে কাজ করতে হবে। শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আস্থা ফিরিয়ে আনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)–এর তামান্না হক। তাতে বলা হয়, ৩ মার্চ পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর যে হামলা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে আহমদিয়াদের ঢাকা অফিসে এইচআরএফবির প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেছে। এ ছাড়া এইচআরএফবির সদস্য সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র এ ঘটনার সরেজমিন তথ্যানুসন্ধান করেছে। পরিদর্শন ও তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে ১৭টি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয় লিখিত বক্তব্যে। সেখানে বলা হয়, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসা বন্ধ করার জন্য পাঁচটি সংগঠন প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছিল ঘটনার আগের দিন। এরপরও যথেষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তেমনি পরিকল্পিত হামলার কোনো কিছু পুলিশ প্রশাসন কেন পূর্ব থেকে জানতে পারেনি, সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। হামলা ও আগুন দেওয়ার শুরুতে পুলিশ কেন দায়িত্ব পালনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, সে প্রশ্নও উঠেছে।

সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহি, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ যারা ঘৃণা ছড়াচ্ছে, তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করা হয় এইচআরএফবির পক্ষ থেকে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন এবং স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালন রঞ্জন কর্মকার।