গৃহকর নিয়ে প্রশাসকের সঙ্গে বাসিন্দাদের হট্টগোল

শুনানি চলাকালে একপর্যায়ে সামনের সারিতে বসা কিছু ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে মঞ্চে থাকা প্রশাসকের সামনে গিয়ে বলতে থাকেন তাঁরা সিদ্ধান্ত মানেন না বলেছবি: প্রথম আলো

গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) ধার্যের বিষয়টি নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সঙ্গে হট্টগোল করেছেন অঞ্চল-৭-এর আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত গণশুনানির শেষের দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গণশুনানি শেষ করে ওই অঞ্চলের চারটি ওয়ার্ডের প্রতিনিধিদের নিয়ে অঞ্চল-৭-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে আলোচনায় বসেন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। সেখানে গৃহকর কীভাবে আদায় হবে, কী ছাড় পাওয়া যাবে—এসব বিষয়ে বাসিন্দাদের বুঝিয়ে বলা হয়। হট্টগোলকারীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য প্রশাসকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

গণশুনানিতে দেখা যায়, নাগরিক সেবা নিয়ে চারটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বিভিন্ন সংকট, সমস্যা ও অভিযোগ জানান। তাঁদের দাবি, তাঁরা ২০১৮ সাল থেকে নয়, ২০২৪ সাল থেকে গৃহকর পরিশোধ করবেন। প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বাসিন্দাদের বলা অভিযোগগুলোর সমাধান, পদক্ষেপ ও করপোরেশনের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেন। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় নিয়ে বাসিন্দাদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে কথা বলছিলেন।

প্রশাসকের বক্তব্য ছিল, আইন অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকেই গৃহকর পরিশোধ করতে হবে। তবে গৃহকরের সঙ্গে পরিচ্ছন্নতা ও সড়ক বাতি বাবদ যে কর আদায় করা হয়, সেই ৫ শতাংশ কর আপাতত আদায় বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বিধিমালা অনুযায়ী গৃহকরে একজন গ্রাহক যেসব ছাড় পান, সেসব ছাড়ের ব্যবস্থাও করা হবে বলেও জানান। সেই হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে যে টাকা কর আসবে, ২০১৮ থেকে একই পরিমাণ কর দিতে হবে।

কিন্তু প্রশাসকের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হননি শুনানিতে অংশ নেওয়া বাসিন্দারা। তাঁরা চিৎকার-চেঁচামেচি করে এর প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে সামনের সারিতে বসা কিছু ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে মঞ্চে থাকা প্রশাসকের সামনে গিয়ে বলতে থাকেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্ত মানেন না। তাঁরা ২০২৪ সাল থেকেই কর দেবেন।

মিনিট পাঁচেক এমন হট্টগোল আর চেঁচামেচি চলে। ঢাকা উত্তর সিটির ওই অঞ্চলের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপির নেতারা উত্তেজিত হওয়া ব্যক্তিদের শান্ত করেন।

ঢাকা উত্তর সিটির ওই অঞ্চলের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপির নেতারা উত্তেজিত ব্যক্তিদের শান্ত করার চেষ্টা করেন
ছবি: প্রথম আলো

পরে প্রশাসক গৃহকরের বিষয়ে বলেন, করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ ও প্রদানের আইন রয়েছে। আইন ভঙ্গ করে কয়েক বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের এখতিয়ার নেই। এটা করলে আইন ভঙ্গ করা হবে। ভবিষ্যতে সবাইকে বিপদে পড়তে হবে। তাই নিয়ম অনুযায়ী সব বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী রিবেট (করছাড়) দেওয়া হবে। আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এ জন্য একটি কর মেলা আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।

ব্যাটারিচালিত রিকশায় না চড়তে, ফুটপাত থেকে না কিনতে প্রশাসকের আহ্বান

ব্যাটারিচালিত রিকশায় না চড়তে এবং ফুটপাতের অবৈধ হকারদের থেকে কেনাকাটা না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তিনি বলেন, এখানে দুটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করুন, আরেকটি ফুটপাত ও রাস্তার অবৈধ হকার উচ্ছেদ করুন। ব্যাটারিচালিত রিকশা বাংলাদেশের সব জায়গায় অবৈধ। সবাই বলছেন ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করুন। কিন্তু আপনারাই অবৈধ এই বাহনে চড়ছেন। সবাইকে বলছি, অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়বেন না। না চড়লে তারা নিরুৎসাহিত হবে। একই ভাবে ফুটপাতের অবৈধ হকারদের কাছ থেকে না কিনে বিপণিবিতান থেকে কেনার আহ্বান জানান।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিষয়ে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি থেকে উচ্চপর্যায়ের কমিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) দিয়ে অটোরিকশার নকশা করা হয়েছে। এটি সফলভাবে সম্পন্ন হলে রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হবে। তখন শুধু সেই লাইসেন্সপ্রাপ্তরা ঢাকার নির্দিষ্ট রোডে চলতে পারবে।

গণশুনানিতে ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৭-এর আওতাধীন ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েক শ বাসিন্দা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, সড়কে পয়োনালার পানি জমে থাকা, মাঠ-পার্ক না থাকা, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন পেতে ভোগান্তির বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এ ছাড়া শুনানিতে উপস্থিত সবাইকে একটি ফরম দেওয়া হয়। সেখানেও অনেকেই তাঁদের লিখিত মতামত ও অভিযোগ জমা দেন।