সাংবাদিক হত্যার বিচার দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দিতে চান সাংবাদিক নেতারা
অধিকার আদায়ে কাজকর্ম বন্ধ করে শিক্ষকেরা রাস্তায় দাঁড়াচ্ছেন। দাবি আদায়ে চিকিৎসকেরাও রাজপথে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু সাংবাদিকেরা তাঁদের দাবি আদায়ে কঠোর কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছেন না। সাংবাদিকদের দাবি আদায়ে প্রয়োজনে টেলিভিশনে দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য ব্ল্যাক আউট ও সংবাদপত্র অন্তত এক দিন বন্ধ রাখার মতো কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টি নতুন করতে ভাবতে হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এক সমাবেশে সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন। সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন বন্ধ ও দ্রুত বিচারের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
সমাবেশে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘অনেক বছর আগে যখন বিএফইউজের সভাপতি ছিলাম, তখন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে কতজন সাংবাদিক মারা গেছেন, তাঁদের তালিকা দিয়েছিলাম। তালিকা দিয়েছিলাম বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও। কিন্তু কোনো কিছু আর আগায় না। আমরা কাগজ দেই, আর পত্রিকায় নিউজ হয়, এই পর্যন্তই শেষ। আমরা একটা সেল করার কথা বলেছিলাম, সেটাও হয়নি।’
জামালপুরের বকশীগঞ্জের সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিম হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে টেনে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, নাদিমের লাশ যখন দাফন করা হয়নি, তখন পুলিশ সুপার বলেছিলেন, তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করা হয়নি। পুলিশের মধ্যে এই ধারণা যদি থাকে যে নাদিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করা হয়নি, তাহলে পুলিশ কীভাবে তদন্ত করবে? আওয়ামী লীগের লোকজন যদি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে থাকে, তাদেরও ধরতে হবে।
বিএফইউজের মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছিলাম, সাংবাদিক হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করে সেখানে সেল গঠন করুন। এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাংবাদিক–বিদ্বেষী কোনো ঘটনা রয়েছে। সাংবাদিকদের কোনো কারণে পছন্দ করেন না। তা না হলে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা পরপর দুবার দেখা করলেও একটি বারও সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেননি। সামনে হয়তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সাংবাদিকদের শক্র বলে ঘোষণা দিতে হবে।’
সমাবেশে উপস্থিতি কম হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দীপ আজাদ। তিনি বলেন, ‘আজকে যাঁরা এই কর্মসূচিতে উপস্থিত নেই, তাঁদের কাছে অনুরোধ রইল, গত আট বছরে যাঁরা সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন, আর্থিক অনুদান পেয়েছেন, অন্তত তাঁরা বিবেকের দায়ে হলেও সাংবাদিকদের এই সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। আজকে নাদিম হারিয়েছে, কাল আরেকজন হারাবে, আপনার পাশে হয়তো কেউ থাকবে না।’
ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘আজকে যদি শিক্ষকেরা কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে অধিকার আদায়ের জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে পারেন, চিকিৎসকেরা কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে রাজপথে দাঁড়াতে পারেন, তাহলে সাংবাদিক নেতাদের আজকে ভাবতে হবে আমরাও অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য আমাদের টেলিভিশনে ব্ল্যাক আউট করতে পারি কি না। অন্তত এক দিন আমাদের সংবাদপত্র বন্ধ রাখতে পারি কি না।’
সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড একটা সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে উল্লেখ করে সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকেরা মরবে তার বিচার হবে না, এটা আজকে এ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।
বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যার বিচার দ্রুত বিচার আদালতে সম্পন্ন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যেসব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরাই শুধু অপরাধী নন, যাঁর বা যাঁদের নির্দেশে তাঁরা নাদিমকে হত্যা করেছেন, তাঁদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, সাংবাদিক নেতা কুদ্দুস আফ্রাদ, জাকারিয়া কাজল, মানিক লাল ঘোষ, খায়রুল আলম, নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানির মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত প্রমুখ।