রাজধানীর সড়কে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে থাকবেন শিক্ষার্থীরা, পাবেন ভাতা

রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে ট্রাফিক পক্ষের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীছবি: পিআইডি

রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আজ সোমবার থেকে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১৫ দিন ট্রাফিক পক্ষ পালিত হবে। এই কাজে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও কাজ করবেন। দেওয়া হবে সম্মানী ভাতা।

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আজ রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে ট্রাফিক পক্ষের উদ্বোধন করে এ কথা বলেন। এর আগে মাঠে জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা হয়। এতে পুলিশ সদস্য ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বর্তমানে প্রায় ২ কোটি মানুষ ঢাকা শহরে বাস করেন। রাজধানীতে যে পরিমাণ রাস্তা থাকা দরকার, বাস্তবে তা নেই। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবকাঠামো বৃদ্ধি পেলেও পরিবহনব্যবস্থা সুশৃঙ্খল ও আধুনিকায়ন হয়নি। সড়কে সড়কে বৈধ–অবৈধ যানবাহনের আধিক্য। এ ছাড়া সময়ে–সময়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তা অবরোধ করায় সড়কের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। সব মিলিয়ে যানজট দিন দিন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০০ ছাত্র ট্রাফিক সপ্তাহে কাজ করবেন। পরে এই সংখ্যা বাড়ানো হবে। তাঁদের সম্মানী ভাতা দেওয়া হবে। ছাত্ররা ৫ আগস্টের পর রাস্তায় ভালো কাজ করেছেন এবং এখন তাঁরা ট্রাফিকের সঙ্গে কাজ করে ট্রাফিকব্যবস্থা উন্নত করতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।

ডিএমপি সূত্র জানায়, আজ ৩০০ শিক্ষার্থী সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে অংশ নিলেও কাল থেকে প্রতিদিন ১ হাজার শিক্ষার্থী ট্রাফিকের সঙ্গে কাজ করবেন।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ সরকারের পতনের পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিকব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। সেই সময় ছাত্র-জনতা স্বেচ্ছায় সড়কে যেভাবে দিনরাত কাজ করে শৃঙ্খলা বজায় রেখেছিলেন, তা উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, শুধু সরকার ও পুলিশের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরে ট্রাফিকব্যবস্থা আশানুরূপ উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে প্রত্যেক মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

ট্রাফিক পক্ষ উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের করা হয়
ছবি: পিআইডি

বর্তমান সরকার সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে ট্রাফিকব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করতে গবেষক দল কাজ করছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে তা সম্ভব হবে। রাজধানীবাসীর ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে যুব, ক্রীড়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সে সময় রাস্তার শৃঙ্খলা রক্ষায় ছাত্র-জনতা কাজ করেছেন। সরকারের প্রতিটি অঙ্গ সক্রিয় রাখতে সহযোগিতা করার জন্য তরুণেরা যেভাবে সহযোগিতা করছেন, এটি একটি অভূতপূর্ব ঘটনা।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বরাত দিয়ে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশে তারুণ্যের যে শক্তি–জাগরণ চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে দেখা গেছে, তা রাষ্ট্র পুনর্গঠনে সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগাতে চান তাঁরা। এরই অংশ হিসেবে তরুণদের সড়কে দায়িত্ব পালনের একটি দাবি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে রাখা হয়েছিল।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম।