শিল্পকলায় নবীন শিল্পীদের মাসব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

২৩তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনীর একটি শিল্পকর্ম
ছবি: প্রথম আলো

নিজের দিকে দুর্দণ্ড তাকানোর সুযোগ যাঁদের হয় না, তাঁরা রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ঘুরে আসতে পারেন। দুটি কারণে শিল্পকলা একাডেমির ২৩তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী ঘুরে আসা উচিত। প্রথমত, একধ্যানে যাঁরা জীবিকার পেছনে ছুটছেন, তাঁদের একটু ভাবনার খোরাক জোগাবে এটি। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের তরুণেরা কেমন শিল্পচর্চা করছেন, সেই ধারণাটাও হয়ে যাবে।

গত ২৭ জুলাই জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হয়েছে ২৩তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ৪২২টি শিল্পকর্ম নিয়ে এতে অংশ নিয়েছেন ২১ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৫৬ জন শিল্পী। প্রদর্শনীর জন্য জমা পড়েছিল ১ হাজার ১৯ জন শিল্পীর ২ হাজার ৩৮টি শিল্পকর্ম। বাছাই–বিন্যাসে বেশ বেগ পেতে হয়েছে আয়োজকদের।

শিল্পকর্মের কত ধরন, কত মাধ্যম থাকতে পারে, এই প্রদর্শনী ঘুরে না এলে অনেকের সে ধারণাই হবে না। তবে সবচেয়ে বিস্ময় ও আনন্দের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের তরুণেরা শিল্পচর্চার মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়তে স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠেছেন। এ তো বাংলার ঐতিহ্য। শিল্পে নবচিন্তার দার্শনিক অভিব্যক্তি যেন আরও চোখা হয়ে উঠেছে। একটি গ্যালারির প্রবেশমুখে টেলিভিশন মনিটরের দিকে তাকিয়েই সেটা আঁচ করা গেল। সেখানে চলছিল একটি পারফরমিং আর্ট। কারণ, দর্শনার্থী তাঁর সুবিধাজনক সময়ে এসেই যেন সেটা দেখতে পান। সেখানে দেখা গেল এক তরুণ মাথায় একটি কাচের পানপাত্র বেঁধে নিয়েছেন। একটি করে মার্বেল ছুড়ে মারছেন সামনের দেয়ালে। সেখানে বাড়ি খেয়ে সেটা ফিরে আসতেই দৌড়ে মাথার পানপাত্রে সেটাকে ধরে ফেলার চেষ্টা করছেন এবং ব্যর্থ হচ্ছেন। এই পরিবেশন শিল্পের নাম তিনি দিয়েছেন ‘অনিশ্চিত লক্ষ্য–২’। মাত্র ২৭ বছরের তরুণ সুমন বিশ্বাস যেন সমাজের অনিশ্চিত লক্ষ্যের পেছনে ছুটে চলা অভ্যাসকেই রূপক হিসেবে পরিবেশন করছেন।

একটা সময় পর্যন্ত নানা মাধ্যমে অঙ্কন বা ভাস্কর্য দেখে তৃপ্ত থাকতে হয়েছে। এখন বাংলাদেশের শিল্পীরা নানা মাধ্যমে শিল্পসৃজনে তৎপর। এই প্রদর্শনীতে চোখজুড়ানো সব চিত্রকলা আছে। অ্যাক্রিলিক, তেলরং, জলরং, ছাপচিত্র ও ভাস্কর্য ছাড়াও আছে কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, গ্রাফিক ডিজাইন, আলোকচিত্র, স্থাপনাশিল্পসহ নতুন সব মাধ্যমের শিল্পকর্ম।

শান্ত–মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছেন স্থাপনাশিল্প ‘প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষাব্রত’। নদীতে পলিথিন আর প্লাস্টিকের জঞ্জাল ফেলে কীভাবে দূষিত করা হচ্ছে—এর শৈল্পিক উপস্থাপন করেছেন তাঁরা। এক জায়গায় দেখা গেল কুড়িয়ে পাওয়া নানা বস্তু দিয়ে শিল্পী আফিয়া ফারজানা বানিয়েছেন একজোড়া চৌপেয়ে প্রাণী। এ শিল্পকর্মের নাম দিয়েছেন ‘সন্ধান’। অব্যবহৃত টায়ার ব্যবহার করে মিলন কুমার দাস বানিয়েছেন ‘দুর্দম’ নামের এক শিল্পকর্ম, যেন জীবনের ভারে ভারাক্রান্ত এক নারীকে তুলে ধরেছেন তিনি।

চিত্রকলা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের অভ্যাস যাঁদের, লক্ষ করলে তাঁরা দেখবেন, অনেক বিখ্যাত চিত্রকর্মের ছায়া রয়েছে এই তরুণদের অনেকের কাজে। কোনো কোনোটি যেন পৌরাণিক সব ছবির এখনকার সংস্করণ। অনন্ত জীবনবাস্তবতাকে রং ও বস্তুর রূপকে উপস্থাপন করা যায় চমৎকারভাবে—এই প্রদর্শনী ঘুরে এলে তা বোঝা যাবে।

২৫ আগস্ট পর্যন্ত নবীনদের এই শিল্পকর্মগুলো দেখে আসা যাবে। সবার জন্য গ্যালারি খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। আর শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা।