ডেমরায় যাত্রীবাহী বাস–লেগুনার সংঘর্ষে আরেক যাত্রীর মৃত্যু

সকালে অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আসিফ। কিছু সময় পরেই আসে তাঁর মৃত্যুর খবর। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে মায়ের আহাজারিছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর ডেমরায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে যাত্রাবাহী বাসের সঙ্গে হিউম্যান হলার লেগুনার সংঘর্ষের ঘটনায় আরও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এই দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হলেন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন আসিফ হোসেন ওরফে সুমন (৩৫), উম্মে হাবিবা (১৫), শামসুননাহার  (৫২) ও আবুল হোসেন (৩৫)। তাঁদের মধ্যে আসিফ বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের ডেমরার সারুলিয়া শাখা লেনদেন সেবা কর্মকর্তা আর উম্মে হাবিবা মাতুয়াইলের ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। আসিফ ছাড়া অন্যদের আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে তাঁদের পরিচয় জানা যায়।

আজ সকাল সোয়া ৯টার দিকে ডেমরার পাইটি এলাকায় গুলিস্তান থেকে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে লেগুনার দুই নারীসহ মোট ছয় যাত্রী আহত হন। গুরুতর অবস্থায় তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় দুই নারীসহ তিনজনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বেলা তিনটার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল হোসেন মারা যান। শামীম হোসেন ও মঈনুদ্দিন নামের দুই যাত্রী এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, বাস ও লেগুনার চালক ও সহকারীরা পালিয়ে গেছে। তবে দুর্ঘটনা কবলিত দুটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় লেগুনাটি দুমড়েমুচড়ে গেছে। নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা আসিফের লাশ স্বজনেরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে শনাক্ত করেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বাকি তিনজনের আঙুলের ছাপ নিয়ে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করে।

আসিফের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাঁর মা ও স্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন। এ সময় আসিফের লাশ দেখে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

আসিফের স্ত্রী রিমা বিশ্বাস বেসরকারি একটি ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী শাখায় কর্মকর্তা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে ডেমরার বাসা থেকে তাঁরা দুজন কর্মস্থলের উদ্দেশে বেরিয়ে যান। এরপরই এই দুর্ঘটনার খবর পান।

আসিফ তাঁর মা ও স্ত্রীকে নিয়ে ডেমরার সারুলিয়া তালতলা মসজিদের পাশে একটি বাসায় থাকতেন। তাঁদের বাড়ি রাজশাহী সদর উপজেলার ঘোড়ামারা সিরোইলে। ২০১৭ সালে আসিফ বিয়ে করেন।

আসিফের মা ফেরদৌসী বেগম বারবার ছেলের মরদেহের বুকের ওপর আছড়ে পড়ছিলেন। বলছিলেন, একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে তিনি কীভাবে বাঁচবেন?

ডেমরা থানার ওসি বলেন, আসিফ সকালে ব্যাংকে পৌঁছানোর পর একটি চেক নিয়ে গ্রাহককে পৌঁছে দিতে ডেমরার দিকে লেগুনায় যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন।  

মাতুয়াইলের ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী উম্মে হাবিবা সপরিবার ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন। চার বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয় ছিল। তার বাবা আবদুস সোবহান স্যানিটারি মিস্ত্রি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে মাতুয়াইলে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয় বলে পুলিশের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন।

পুলিশ জানায়, সিআইডি শামসুননাহার ও আবুল হোসেনের আঙুলের ছাপ মিলিয়ে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করেন। শামসুন্নাহারের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের কুতুবপুরের। তাঁর বাবা হারিছ উদ্দিন। শামসুননাহার ও আবুল হোসেনের লাশ নিতে তাঁদের স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে।