বিপরীত চিন্তাকে নিতে চাই না, কিন্তু চিন্তার প্রতিটি পিঠ দ্যুতি ছড়ায়: সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

আলোচনা অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আজম, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও সুমন রহমান। শনিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে
ছবি: সংগৃহীত

‘আমরা বিপরীত চিন্তাকে গ্রহণ করতে চাই না। অথচ চিন্তা একটি চলমান ব্যাপার। চলমান মুদ্রার মতো এর দুটি নয়, বহু পিঠ থাকে, অনেকটা হীরার মতো। এর প্রতিটি পিঠ থেকে দ্যুতি বের হয়।’ ‘সাংস্কৃতিক রাজনীতি ও বাংলাদেশ’ বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেন কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

শনিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে ছিল বই নিয়ে আলোচনা ও তত্ত্বতালাশের আয়োজন ‘গ্রন্থ আলাপন’। জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের নতুন এ আয়োজনে লেখক তাঁর বই নিয়ে মুখোমুখি হন পাঠক ও আলোচকের। প্রথম পর্বে আলোচনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ আজমের প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘সাংস্কৃতিক রাজনীতি ও বাংলাদেশ’ নিয়ে।

নিজের বই প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘বাংলাদেশ উদ্‌যাপন’ পর্যালোচনা উপলক্ষে এই বইয়ের লেখা বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্কৃতি নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংলাপময়তা হারিয়েছে। এ কারণে শাসকশ্রেণির মধ্যে ক্ষমতার স্থানান্তর স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে না। বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক উপনিবেশায়ন ঘটেছে। কলকাতায় উৎপাদিত চিন্তাভাবনা ঢাকায় বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া গ্রহণ করা হয়েছে। আবার কলকাতায় দেড়-দু শ বছরে যে বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, সেটা ঢাকায় ঘটেনি। বর্তমানে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সাংস্কৃতিকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

আলোচক হিসেবে বই নিয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) গণমাধ্যম অধ্যয়ন ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সুমন রহমান। তিনি বলেন, ‘সাংস্কৃতিক কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে আমরা পশ্চিমা তৈরি বর্গগুলো নির্বিচার গ্রহণ করি। এমনকি আধুনিকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা বর্গগুলো পর্যালোচনা না করে কলকাতা থেকে গ্রহণ করেছি।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‌‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সমালোচনার শিক্ষা নেই। কিন্তু এই চর্চা ও প্রশ্ন উত্থাপনের রেওয়াজ তৈরি হলে সমাজ এগিয়ে যেত।’ চিন্তার জগতে ঝাঁকুনি দেওয়ার অবিরাম চেষ্টার কারণে মোহাম্মদ আজমকে এই সময়ের উল্লেখযোগ্য বুদ্ধিজীবী অভিহিত করে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘আশা করি মোহাম্মদ আজমদের এসব চেষ্টা একসময় সমাজে বহু চিন্তক তৈরি করবে, যারা সমাজকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখবে।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আহরার আহমদ। তিনি বলেন, জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন দেশীয় লেখক, বুদ্ধিজীবীদের উৎসাহ দিতে বুদ্ধিবৃত্তিক বিচিত্র অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। নতুন এ আয়োজন মুক্তচিন্তা, উদার ও প্রশ্নভিত্তিক চিন্তাচর্চাকে বহুগুণ উৎসাহ দেবে এবং একাডেমিক ও সুসংবদ্ধ আলোচনামুখী চিন্তাপদ্ধতি অবলম্বনে আগ্রহী করে তুলবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তরুণ লেখক, শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা। বই ও এর বিষয়সংশ্লিষ্ট নানা প্রশ্ন করেন উপস্থিত শ্রোতারা। তাঁদের প্রশ্নের জবাব দেন লেখক ও আলোচক।