নূরজাহান মুরশিদ ও খান সারওয়ার মুরশিদ একটি প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। পঞ্চাশের দশকে যে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল, তাতে আদর্শ ব্যক্তিত্ব ছিলেন এই দুজন। শুধু স্মরণই যথেষ্ট নয়, তাঁদের মূল্যবোধের চর্চাও গুরুত্বপূর্ণ।
‘এক জীবনের আলো’ শিরোনামে নূরজাহান মুরশিদ স্মরণানুষ্ঠানে উঠে এসেছে এসব কথা। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর লালমাটিয়ায় ছায়ানট মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথম পর্বে স্মৃতিচারণার পর দ্বিতীয় পর্বে আয়োজিত হয় পদক প্রদান।
সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ‘নূরজাহান মুরশিদ স্মৃতিপদক ২০২৩’ সম্মাননায় ভূষিত হন প্রতিভা মুৎসুদ্দি, হামিদা হোসেন ও কৃষ্ণকুমারী সিনহা। তিন নারীকে ভূষিত করা হয় ‘চির বিজয়িনী’ খেতাবে।
নূরজাহান মুরশিদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি ভিডিও চিত্র পাঠান প্রতিভা মুৎসুদ্দি। কৃষ্ণকুমারী সিনহার পক্ষ থেকে পদক গ্রহণ করেন তাঁর ভাবশিষ্য সুকান্ত সিংহ। তাঁদের হাতে পদক তুলে দেন অধ্যাপক রওনক জাহান এবং লেখক, সাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক হামিদা হোসেন বলেন, ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তনের জন্য নূরজাহান মুরশিদ ছিলেন অনুসরণীয় ব্যক্তি। এ সময় ‘নিউ ভ্যালুজ’ ও ‘এদেশ-একাল’ পত্রিকার মতো ঐতিহাসিক পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গে নূরজাহান মুরশিদের শ্রম-নিষ্ঠার স্মৃতিচারণা করেন তিনি।
হাসনাত আবদুল হাই বলেন, নূরজাহান মুরশিদ এমন সময় বেড়ে উঠেছিলেন, যখন রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের একটি মেয়ের শিক্ষিত হওয়াই ছিল কঠিন। তিনি ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’র প্রথম মুসলিম নারী কর্মী।
পদক পাওয়া সবাইকে অভিনন্দন জানান অধ্যাপক রওনক জাহান। পঞ্চাশের দশকে অনেক কম নারী শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময়ে এগিয়ে থাকা মানুষদের একজন নূরজাহান মুরশিদ। তাই তাঁর আদর্শের চর্চা গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে নূরজাহান মুরশিদের দিনলিপি থেকে পাঠ করে শোনানো হয়। এর অধিকাংশই ছিল একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের সঞ্চালনা করেন নূরজাহান মুরশিদের মেয়ে শারমিন মুরশিদ। তিনি তুলে ধরেন নূরজাহান মুরশিদের আদর্শ ও লড়াইয়ের কথা। মায়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে নিজের শৈশবের কথা বলেন আরেক মেয়ে তাজিন মুরশিদ।
নূরজাহান মুরশিদের ২০তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে ‘উত্তরসূরি’ আয়োজিত স্মরণানুষ্ঠান শুরু হয় অতুলপ্রসাদ সেনের দুটি গান দিয়ে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী গেয়ে শোনান, ‘আমারও পরান কোথা যায়’ এবং ‘তাহারে ভুলিব বলো কেমনে’ গান দুটি। নূরজাহান মুরশিদের নাতনি নাভিন মুরশিদ পরিবেশন করেন রবীন্দ্র সংগীত।
নারী জাগরণের নেত্রী, রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূরজাহান মুরশিদ। সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ ও সংসদ সদস্য নূরজাহান মুরশিদ ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী। ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি।