মা–বাবা হত্যার বিচার চাই: সাগর–রুনির ছেলে

মা–বাবার ছবি ছুঁয়ে দেখছে মাহির সরওয়ার মেঘ
ছবি: প্রথম আলো

সিঁড়ি দিয়ে দোতলার কক্ষে ঢুকতেই হাতের ডান পাশের দেয়ালে ঝুলছে সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির একমাত্র ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘের একটি পাঞ্জাবি। সেই দেয়ালজুড়েই তিনজনের একসঙ্গে নানা ছবি, ব্যবহারের কাপড় ও নানান জিনিস সাজানো। আরেকটি দেয়ালে ছোট ছোট কাগজে বিভিন্ন রং দিয়ে লেখা—বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। লেখাগুলোর সামনে সুতা দিয়ে ঝোলানো সাগর–রুনির ছবি। আরেকটি দেয়ালে সাঁটানো সাগর–রুনির একটি কাগজের ছবিতে হাত দিয়ে আদর করছিলেন ছেলে মাহির। মা–বাবাকে নিয়ে  সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিল সে। কথা বলতে বলতে একসময় কিশোর মাহির বলে উঠল—‘আমি খুব টায়ার্ড (ক্লান্ত)।’

রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের ‘কালিন্দী’ নামের বাড়ির একটি ভবনের দোতলায় আজ শনিবার চলছে ‘সাগর–রুনি ক্রাইম সিন ডু নট ক্রস’ শীর্ষক প্রদর্শনী। সাগর-রুনি পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধব এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। ইমরান হোসেন পিপলুর তত্ত্বাবধানে (কিউরেটর) এ প্রদর্শনীতে শিল্পী এ এইচ ঢালী তমাল, ফারহানা রহমান, ইমরান সোহেল, সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির, সানজিদ মাহমুদ, আমিনুল হাসান লিটু, সুলেখা চৌধুরী, তাহমিনা হাফিজ লিসা ও ফাইজুল ইসলাম তাঁদের শিল্পকর্ম প্রদর্শন করেন।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খুন হন এই সাংবাদিক দম্পতি। ঘটনার সময় বাসায় ছিল তাঁদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। সাগর মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।

রুনির ভাই নওশের আলম বলেন, ‘দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এত শক্ত যে আমাদের এই প্রতিবাদী আয়োজন কিছুই করতে পারব না। কিন্তু রাষ্ট্র যে আমাদের সঙ্গে অন্যায় করেছে, সেটা বলতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘বিচার না পেতে পেতে একসময় সব চুপ হয়ে যায়, খুনি চক্র সেটাই চায়। কিন্তু আমাদের উচিত সেটা সব সময় বাঁচিয়ে রাখা।’

একটি কক্ষে প্রদর্শন করা হয় এই দম্পতি খুন হওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া খবর
ছবি: প্রথম আলে

যে তিনটি কক্ষে প্রদর্শনী চলছে, তার একটিতে প্রদর্শন করা হয় এই দম্পতি খুন হওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া খবর। সেই সময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ প্রধানের বক্তব্য টিভি স্ক্রিনে প্রচার করা হয়। সেদিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন (প্রয়াত) বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। খুনের দুই দিন পর পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহামুদ খন্দকারও বলেছিলেন, তদন্তের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।

কক্ষটির এক কোণে রাখা পারিবারিক অনেক ছবি। আরও রয়েছে সাগরের লেখা কয়েকটি বই। সেখানে একটি ফ্রেমে বাঁধাই করা মাকে নিয়ে মাহিরের আঁকা একটি ছবি। সেখানে  মাহির লিখেছে,  ‘আই লাভ ইউ মা’।

মাহির সরওয়ার মেঘ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব সময় বাবা–মাকে মনে পড়ে। সপ্তাহে একবার তাঁদের কবরের পাশে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমি বাবা-মা হত্যার বিচার চাই।’

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খুন হন এই সাংবাদিক দম্পতি। ঘটনার সময় বাসায় ছিল তাঁদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ
ছবি: প্রথম আলো

‘সাগর-রুনি ক্রাইম সিন ডু নট ক্রস’ প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা আলোকচিত্রী শহিদুল আলম প্রমুখ। প্রদর্শনী দেখতে এসে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মন্তব্য খাতায় লিখেছেন, ‘বিচার চাই , মেঘের কাছে দায়মুক্ত হতে চাই।’