ঘোরা–খাওয়া এক স্থানে
আহারে বিহারে ইসিবি চত্বর
সড়কগুলো বেশ পরিচ্ছন্ন। আশপাশের সড়কগুলোতে যানবাহনের জটলাও তুলনামূলক কম। অনেক বহুতল আবাসিক ভবন গড়ে উঠেছে এই এলাকায়।
ইসিবি চত্বর। মিরপুর–পল্লবী এলাকায় নতুন গড়ে ওঠা এই স্থানের পরিবেশটাই আলাদা। গোলচত্বরের মাঝে সড়কদ্বীপে স্থাপিত সামরিক বাহিনীর একটি সাঁজোয়া যান। প্রশস্ত সড়ক। পূর্ব দিকে সেনানিবাস। বিমানবন্দরের দিক থেকে নেমে এসেছে ফ্লাইওভারের র্যাম্প। পশ্চিম দিকে কালশী। আরেকটি ফ্লাইওভারের র্যাম্প উঠে গেছে ইসিবি চত্বর থেকে খানিকটা সামনে। উত্তরে বাউনিয়া আর দক্ষিণে মাটিকাটা এলাকা। রাজধানীর বর্ধিষ্ণু এলাকা।
নতুন নতুন নির্মাণ। সড়কগুলো বেশ পরিচ্ছন্ন। আশপাশের সড়কগুলোতে যানবাহনের জটলাও তুলনামূলক কম। অনেক বহুতল আবাসিক ভবন গড়ে উঠেছে এই এলাকায়। বাণিজ্যিক ভবন করা হয়েছে গোলচত্বরের পাশ দিয়ে। সড়কের পাশ দিয়ে কিছু গাছগাছালিও রোপণ করা হয়েছে। বাড়তে থাকা নতুন এলাকায় যেমন হয়, তেমন একরকম ঝকমকে আবহ আছে ইসিবি চত্বরের আশপাশে। যোগাযোগব্যবস্থাও ভালো। মিরপুর ১১ নম্বরে মেট্রোরেল স্টেশনে নেমে কালশী সড়ক ধরে সোজা চলে আসা যায়। আবার বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে ফ্লাইওভার হয়েও যাতায়াতের ব্যবস্থা আছে। ফলে জমজমাট হয়ে উঠছে এলাকাটি।
কেনাকাটা, বেড়ানো, আড্ডা দিয়ে সময় কাটানোর স্থান হিসেবেও ইসিবি চত্বর বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে আছে বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের পোশাক, সাজসজ্জা, ইলেকট্রিক সামগ্রীর বিক্রয়কেন্দ্র। উত্তর দিকের সড়কের পাশে সার বেঁধে গড়ে উঠেছে অনেক খাবারের দোকান। দেশি খাবার আর কাবাব তন্দুরির জন্য ‘সিটি কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’ বেশ জনপ্রিয়। সকাল থেকেই এখানে নাশতা, দুপুরের খাবার ও বিকেল থেকে কাবাব তন্দুরি পাওয়া যায় বলে জানালেন ব্যবস্থাপক বাবু আহমেদ।
এখানে দেশি খাবারের জন্য ‘শাহেবান’ রেস্তোরাঁর বেশ নামডাক আছে। কাচ্চি, তেহারি, মোরগ পোলাও পাওয়া যায় স্বাদ বিরিয়ানি হাউসে। চীনা ও থাই খাবারের রেস্তোরাঁও আছে কয়েকটি। এসব খাবারের দোকানের মধ্যে আছে খানাজ, ফ্রি ফুড, ফুড ফেয়ার টেস্টি লাউঞ্জ। ‘ইয়ারা’ নামের বেশ চমৎকার সাজসজ্জার একটি কেক-পেস্ট্রির দোকানও দেখা গেল পথের ধারে।
ইসিবি চত্বরে তরুণদের সমাগম ঘটে ‘এ এস ডব্লিউ মেগা ফুড পার্কে’। প্রধান সড়কের সঙ্গেই বড় আকারে সাইনবোর্ড। অনেকটা তোরণের মতো। সড়ক থেকে খানিকটা ঢালু হয়ে নেমে গেছে কংক্রিটের ফলক বিছানো পথ। ভেতরে বিশালাকার ফুড পার্ক। পথের দুই পাশ দিয়ে দোকানের সারি। বড় দোকানগুলোর সামনে টেবিল–চেয়ার পেতে বসার ব্যবস্থা। ছোট আকারের দোকানগুলোর সামনে বা পাশে টুল, বেঞ্চ ও চেয়ার সাজানো। দোকানগুলোর আশপাশ দিয়ে মৌসুমি ফুল ও নানা জাতের শোভাবর্ধনকারী গাছ লতাগুল্মের সবুজ সমারোহ সৃষ্টি করেছে দৃষ্টিস্নিগ্ধ নান্দনিক পরিবেশ। ফুড পার্কের শেষ প্রান্তে আছে ‘কিডস জোন’। শিশু-কিশোরদের আনন্দ বিনোদনের জন্য বেশ কিছু রাইড আছে সেখানে। কিডস জোনটি খোলা হয় দুপুরের পর থেকে। তবে খাবারের দোকানগুলো দুপুর ১২টা থেকে খোলে, বন্ধ হয় রাত ১১টা নাগাদ।
ফুড পার্কে পৃথক প্রায় ৩০টির মতো খাদ্য ও পানীয়ের দোকান আছে। এখানে চায়নিজ, উপমহাদেশীয়, ইউরোপীয় বিভিন্ন রকম খাবার পাওয়া যায়। এমনকি রুটি পরোটা দিয়ে খাওয়ার জন্য হাঁসের মাংসের ভুনা পাবেন ভোজনরসিকেরা। এমনটাই জানালেন ‘ইট আউট’ নামের খাবারের দোকানের হিসাবরক্ষক জেহাদ হোসেন। তাঁদের এখানে প্রতিদিনই হাঁসের মাংসের ভুনা পাওয়া যায়। প্রতি বাটি ৩০০ টাকা। এ ছাড়া মম, চাওমিন, শাশলিক প্রভৃতি আছে বিস্তর।
‘বাইট বিস্ট্রো’ নামের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে চিকেন ও বিফের বিভিন্ন রকম বার্গার, স্যান্ডউইচ, নাচোস, মিটবক্স, শর্মা, স্টেক, পাস্তা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এসব। খাবারের দাম ১২০ থেকে ২৫০ টাকা। চিকেন ও বিফের বিভিন্ন প্রকারের কম্বো প্ল্যাটার পাওয়া যায়। গত বুধবার দুপুরে ব্যবস্থাপক রাসেল রানা জানালেন, এই ফুডকোর্টটি আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেশ পছন্দের স্থান। বিএফএ শাহীন, কুর্মিটোলা, আদমজীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এখানে খেতে আসেন। বিকেলের পর থেকে মিরপুর ও পল্লবী এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে সপরিবারে আসেন।
এখানে ডোমিনোস পিৎজা, বার্গার অ্যাটাক, ফ্রেন্ডস ফুড কর্নার, গার্ডেন বিস্ট্রোসহ খাবারের দোকান আছে অনেকগুলো।
স্মুদি, ফলের রস, লাচ্ছি, কফিসহ ঠান্ডা-গরম অনেক প্রকারের পানীয়ের সম্ভার আছে ‘থ্রাস্টি অ্যাস্ট্রো’তে। ব্যবস্থাপক মো. কবির হোসেন জানালেন, ২০২৩ সাল থেকে এই ফুডকোর্ট চালু হয়েছে। চালুর পর থেকেই ফুড পার্কটি আশপাশের মানুষ ও তরুণদের রসনা বিলাস আর সময় কাটানোর পছন্দের স্থানে পরিণত হয়েছে। গত বুধবার ফুডকোর্টে দুপুরের খাবার খেতে এসেছিলেন আকমল হোসেন ও সোবহান আহমদ। তাঁরা কালশী এলাকায় একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মাঝেমধ্যে একটু ভিন্ন স্বাদের খাবারের জন্য তাঁরা এই ফুডকোর্টে আসেন বলে জানালেন।
এখানে খাবারের দোকান ছাড়া ‘গিফট কর্নার’ নামে উপহার সামগ্রীর দোকানও আছে। প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে আহারে আড্ডায় সময় কাটাতে এসে পছন্দের উপহারও দিতে পারবেন।