‘মিষ্টি খেতে’ শ্রমিক লীগ নেতার চাঁদাবাজি
‘সেলিম ভাই’ পাঠিয়েছে। মিষ্টি খাওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। টাকা নিয়ে মিরপুর থানা জাতীয় শ্রমিক লীগের পশ্চিম মণিপুরের কার্যালয়ে যেতে বলেন কয়েক তরুণ। গত ১ জানুয়ারি রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকার মিজান টাওয়ারের একটি আবাসিক হোটেলে এসে এভাবে চাঁদা দাবি করেন তাঁরা। চাঁদার টাকা না পেয়ে দুই সপ্তাহ পর তাঁরা ওই হোটেলে হামলা ও ভাঙচুর চালান।
এ সময় হোটেলের ব্যবস্থাপকসহ ছয়জন আহত হন। যাওয়ার সময় হোটেলের সিসি ক্যামেরা ভেঙে হামলাকারীরা ক্যাশ থেকে ১৫ হাজার টাকা ও ২টি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন।
এ ঘটনায় গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করা হয়। পরদিন পুলিশ মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁরা হলেন সোহেল রানা (৩২), মো. টিপু (২৭), মনির হোসেন (৩২) ও রমজান ইসলাম (২৬)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা চাঁদার টাকা না পেয়ে হামলা ও হোটেলে ভাঙচুরের কথা স্বীকার করেন বলে পুলিশ জানায়।
পুলিশ সূত্র জানায়, মিরপুর থানা শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজার নেতৃত্বে এই তরুণেরা বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। চাঁদার দাবিতে তাঁরা বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান। আবার কখনো হামলা ও ভাঙচুর চালান তাঁরা। শ্রমিক লীগ নেতা সেলিমের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় চাঁদাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে তিনি পলাতক।
আবাসিক হোটেলের মালিক আজমল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রমিক লীগ নেতা সেলিম রেজার কথা বলে কয়েক তরুণ আমার প্রতিষ্ঠানে এসে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা নিয়ে তাঁরা শ্রমিক লীগের কার্যালয়ে যেতে বলেন। আমি বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানিয়েছিলাম। তাঁকে জানানোর পরদিন ওই তরুণেরা আমার হোটেল হামলা ও ভাঙচুর চালান।’
সেলিমের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে মিরপুর থানায় আরেকটি চাঁদাবাজি মামলার এজাহার প্রথম আলোর হাতে এসেছে। সেখানে মামলার বাদী নাজমুস সাকিব অভিযোগ করেন, সেলিমসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ ব্যক্তি তাঁর প্রতিষ্ঠান এন এস বিল্ডার্স ডেভেলপারের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পুলিশ ওই মামলায় সেলিমের দুই সহযোগী আমির উদ্দিন ও আওলাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। মামলা তদন্ত শেষে ওই বছরের নভেম্বরে সেলিম ও তাঁর ওই দুই সহযোগীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন প্রথম আলোকে বলেন, চাঁদাবাজির মামলায় সম্প্রতি চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িত বাকি ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
কে এই সেলিম রেজা
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেলিমের বাড়ি শরীয়তপুরের সখীপুরের কাচিকাটা কৃষ্ণপুর এলাকায়। তিনি মিরপুর থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। চাঁদাবাজিসহ কয়েকটি মামলায় তাঁর নাম আসায় তাঁকে সংগঠন থেকে ২০২১ সালে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের পরও তিনি জোরপূর্বক শ্রমিক লীগের অফিসে বসেন। সেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে চাঁদা দাবি করেন।
স্থানীয় কয়েক ব্যবসায়ী বলেন, তাঁর সঙ্গে মুকুল নামের এক ব্যক্তি নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। তিনি স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার ভাগনে পরিচয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করে তিনি মূলত চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অপরাধ করছেন।
শ্রমিক লীগের স্থানীয় কয়েক নেতা-কর্মী বলেন, বাবু হত্যা মামলার আসামি এই সেলিম। মিরপুরে ২০০১ সালে বাবু নামের এক ব্যক্তি খুন হন। ওই ব্যক্তি খুন হওয়ার আগে সেলিমের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।
সেলিম রেজাকে বহিষ্কার প্রসঙ্গে মিরপুর থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি আছাদ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, হত্যা, চাঁদাবাজিসহ কয়েকটি মামলার আসামি হওয়ায় তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি দলীয় পদ ব্যবহার করে নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন।