আকর্ষণীয় পিএসসির কারণে সমুদ্রে আগ্রহ বেড়েছে

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরীছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে সরকার। এর জন্য এবার আগের চেয়ে সুবিধা বাড়িয়ে নতুন উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) করা হয়েছে। আকর্ষণীয় পিএসসির কারণেই সমুদ্রে বিদেশি কোম্পানির আগ্রহ বেড়েছে। অনেকেই দরপত্রে অংশ নিতে ইতিমধ্যে যোগাযোগ করেছে। এতে বিশ্বের শীর্ষ তেল-গ্যাস কোম্পানি প্রতিযোগিতা করতে পারে।

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর পেট্রোসেন্টারে আজ সোমবার এটির আয়োজন করে বাংলাদেশ তেল–গ্যাস–খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)।

এতে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরী বলেন, এবার বেশ কিছু নতুন দিক আছে পিএসসিতে। বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযোগী করে পিএসসি তৈরি করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে অনুসন্ধান কূপের বাধ্যবাধকতা নেই। আকর্ষণীয় পিএসসির কারণে ভালো সাড়া আসবে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ২০১৬ সালে সমুদ্রে বহুমাত্রিক জরিপের উদ্যোগ শুরু হয়। এটি শেষ হয়েছে। মাঝখানে পিএসসি তৈরি করতে তিন বছর ও করোনায় দুই বছর চলে গেছে। তাই দরপত্র আহ্বানে দেরি হয়েছে। বহুপ্রতীক্ষিত দরপত্রপ্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো। এশিয়া, আমেরিকার অনেক দেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। সফলতায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি অংশ নেবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব নূরুল আলম বলেন, সমুদ্রে ইতিবাচক সাড়া এসেছে। আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব সম্পদ আহরণে জোর দিতে হবে। তাই সমুদ্রের পাশাপাশি স্থলেও বিদেশি কোম্পানি দিয়ে অনুসন্ধান চালাতে নতুন পিএসসি তৈরি করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার। এতে বলা হয়, গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ৯টি ব্লকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কোনো কোম্পানি এক বা একাধিক ব্লকে অংশ নিতে পারবে। নয়টি সংবাদপত্রের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সব দূতাবাসে জানানো হয়েছে। ৫৫টি বিদেশি কোম্পানিকে সরাসরি আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, নতুন পিএসসি আকর্ষণীয় করা হয়েছে। বিনিয়োগের খরচ বছরে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত উদ্ধারের সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে ঠিকাদার কোম্পানি দ্রুত বিনিয়োগ তুলতে পারবে। আবার বিনিয়োগ তোলার পর পেট্রোবাংলার লভ্যাংশ বাড়বে। গ্যাসের দাম একই না রেখে ব্রেন্ট ক্রুড ওয়েলের দামের ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বিশ্ববাজার বুঝে গ্যাসের মূল্য বাড়বে বা কমবে।

এর আগে ১০ মার্চ ওয়েবসাইটে ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন ছেপে দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। এতে বলা হয়, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর বেলা একটার মধ্যে আগ্রহী তেল-গ্যাস কোম্পানিকে দরপত্র জমা দিতে হবে। দরপত্রে অংশ নিতে হলে নিজ দেশের বাইরে ভিন্ন দেশে অন্তত একটি কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। দিনে অন্তত ১৫ হাজার ব্যারেল তেল বা ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের অভিজ্ঞতা লাগবে। অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) ১০ শতাংশ মালিকানা সংরক্ষিত থাকবে।

২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সর্বশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৬ সালে। এরপর ২০১৯ সালে নতুন উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। গত বছরের জুলাইয়ে নতুন পিএসসি-২০২৩ চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এখন গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ১১টি ব্লক আছে। এর মধ্যে অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ। বাকি ২৪টি ব্লকে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এখন।

দরপত্রের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বাজারের ভিত্তিতে আবিষ্কৃত তেলের ন্যায্য দাম নির্ধারিত হবে। অনুসন্ধানকাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনতে কোনো আমদানি শুল্ক দিতে হবে না। কোম্পানির করপোরেট আয়কর পরিশোধ করার দায়িত্ব পেট্রোবাংলার। দ্বিমাত্রিক জরিপ চালানো বাধ্যতামূলক। অনুসন্ধানে কাজের আরও কিছু ন্যূনতম বাধ্যবাধকতা আছে। ইতিমধ্যে বিদেশি কোম্পানি দিয়ে সমুদ্রে পেট্রোবাংলার পরিচালিত বহুমাত্রিক জরিপের তথ্য কিনে নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।