সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা স্থগিত, শিশুমেলার মোড়েই অবস্থান করবেন আন্দোলনকারীরা
সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে মিরপুর সড়ক অবরোধকারী জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা সচিবালয় অভিমুখে তাঁদের যাত্রা স্থগিত করেছেন। স্বীকৃতির দাবিতে শিশুমেলার মোড়েই তাঁরা অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট কুষ্টিয়াতে একচোখে গুলিবিদ্ধ হন কোরবান শেখ। তিনি জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা শিশুমেলার এই সড়কেই অবস্থান করব।’
আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানীর আগারগাঁও ও দুপুর থেকে মিরপুর সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত বেশ কয়েকজন। এতে মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।
বেলা আড়াইটার দিকে মিরপুর সড়ক অবরোধ করে রাখা আহতদের মধ্যে সোহেলী নামে এক নারী দাবি মেনে নিতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
শ্যামলীতে শিশুমেলার সামনে পদচারী সেতুর কাছে কামরুল নামে এক ব্যক্তির গলায় রশি দেখা গেছে। তিনি বলেছেন, বিকেল ৪টার মধ্যে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দিলে আত্মহত্যা করবেন। তাঁর গলায় ‘হয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, না হয় আত্মহত্যা!’ লেখা পোস্টার ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়।
এর আগে সকালে রাজস্ব ভবন থেকে শুরু করে টিবি হাসপাতালের রাস্তা বন্ধ করে দেন আহত বেশ কয়েকজন। এখানে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকেই তাঁরা অবস্থান নিয়েছিলেন বলে জানান।
সকালে আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নেন আহত ব্যক্তিরা। এসব এলাকা দিয়ে যানবাহন যেতে দেওয়া হয়নি। রোগী বা অ্যাম্বুলেন্স দেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় এই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশে দেখা দেয় যানজট।
চিকিৎসাসেবা ঠিকমতো পাচ্ছেন না—এমন অভিযোগ করে গতকাল রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভেতর বিক্ষোভ দেখান জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আহত এই ব্যক্তিরা। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। রাতেও বিক্ষোভ চলে।
সড়কে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন কবির হোসেন। আন্দোলনের সময় তাঁর চোখে গুলি লেগেছিল। কবিরের বাড়ি মিরপুর-১১-তে। তিনি বলছিলেন, তাঁর চোখে সমস্যা আছে। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালেই ছিলেন। তবে এখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাসায় গেলেই অসুখ বেড়ে যায়। হাসপাতালে এলে একটা ড্রপ ও ব্যথার ওষুধ দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর সুচিকিৎসা দরকার।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, যাঁরা বিক্ষোভ করছেন, তাঁদের কারও এক চোখে আঘাত, আবার কারও দুই চোখেই আঘাত লেগেছে। অনেকের আঘাত গুরুতর। কিন্তু তাঁদের অনেকেই সঠিক চিকিৎসা পাননি।
বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ রাস্তার মাঝে চাদর বিছিয়ে শুয়েছেন। রাস্তার মাঝে বেঞ্চ পেতেও বসেছেন অনেকে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে সহায়তা পাওয়ার প্রক্রিয়া ধীরগতির; তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে।
এখন হাসপাতালে যাঁরা আছেন, তাঁদের চিকিৎসা ঠিকমতো করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। তাঁদের দাবি, এ জন্য সুচিকিৎসা দিতে হবে, প্রয়োজনে বিদেশে পাঠাতে হবে।
বিক্ষোভকারীদের একজন মো. দুলাল। তিনি হাতে আঘাত পেয়েছিলেন। দুলাল বলেন, তিন মাস আগে সরকারের পক্ষ থেকে সুচিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এখন পর্যন্ত কোনো ভালো চিকিৎসা তিনি পাননি।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, সরকারের কেউ এখন তাঁদের খোঁজখবর আর নেন না। আন্দোলনে তাঁদের অবদান রয়েছে। সুচিকিৎসার পাশাপাশি তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।