মুসা বিন শমসেরের মামলা ‘জটিল প্রকৃতির’, তাই তদন্ত শেষ হচ্ছে না

মুসা বিন শমসের
ফাইল ছবি

শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা গাড়ি ব্যবহার করছিলেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। দুই কোটি টাকার বেশি শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া গাড়িটি জব্দের পর মুসা বিন শমসেরসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দিয়েছিল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরপর সাড়ে পাঁচ বছর পার হয়েছে। কিন্তু মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। এ পর্যন্ত ১২ বার আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছে সংস্থাটি।

আদালতে জমা দেওয়া সর্বশেষ (গত বছর ২৪ জানুয়ারি) প্রতিবেদনে বারবার বলা হয়েছে, ‘মামলাটি বেশ জটিল প্রকৃতির। তদন্তকার্যে যথেষ্ট সময় ব্যয় হচ্ছে।’ এর আগের বছরগুলোতে আরও ১১ বার সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। সেসব আবেদনেও সংস্থাটি একই কথা বলেছে।

এই মামলায় তদন্ত কেন শেষ হচ্ছে না, সে প্রশ্নের জবাবে সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সৌরভ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলমান। আমার আগেও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন।’

২০১৭ সালের ২২ মার্চ মুসা বিন শমসেরের বিলাসবহুল রেঞ্জ রোভার মডেলের গাড়িটি আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। অভিযোগ রয়েছে, আনুমানিক চার কোটি টাকা দামের এই গাড়িটি সে সময় লুকানোর চেষ্টা করেও পারেননি তিনি।

এ ঘটনায় ওই বছরের ৩১ জুলাই রাজধানীর গুলশান থানায় মুসা বিন শমসেরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়। সেখানে অভিযোগ করা হয়, কারনেট সুবিধায় গাড়ি আমদানি করে জালিয়াতির মাধ্যমে নিবন্ধন নিয়ে তার অপব্যবহার করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, চট্টগ্রাম কাস্টমসের মাধ্যমে গাড়িটি আনা হয়। বিআরটিএর কর্মকর্তা আইয়ুব আনসারীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় ফারুক উজ জামানের নামে গাড়িটি নিবন্ধন করা হয়। পরে মুসা বিন শমসের গাড়িটি ব্যক্তিগত কাজে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করেন। ফারুক উজ জামান মুসা বিন শমসেরের আত্মীয়।

২০১৫ সাল থেকে ফারুক উজ জামানের গাড়িটি তিনি ভাড়ায় ব্যবহার করেন। তবে ভাড়াসংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। মামলায় আরও বলা হয়, মুসা বিন শামসেরের ভাষ্য, ফারুক উজ জামান গাড়িটি কিনেছেন মেসার্স অটো ডিফাইন থেকে। আর অটো ডিফাইন কিনেছে ফরিদ নাবিরের কাছ থেকে। তবে লিখিত বক্তব্যে মুসা বিন শমসের জানান, সুইস ব্যাংকে তাঁর ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে আছে। তবে এই টাকার উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। এ ব্যাপারে তিনি গ্রহণযোগ্য কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এ বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মামলায় উল্লেখ করেছিল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন

এই মামলায় ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি আদালতে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। সেখানে বলা হয়, মুসা বিন শমসেরের দখলে থাকা রেঞ্জ রোভার জিপটির মালিক ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক ফরিদ নবীর। গাড়িটি তিনি শুল্কমুক্ত সুবিধায় বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তবে শর্ত ছিল, তিন মাসের মধ্যে তিনি গাড়িটি আবার ফেরত নিয়ে যাবেন। তবে গাড়িটি তিনি ফেরত না নিয়ে বরং ওয়াহিদুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করেন। গাড়িটির ওপর শুল্ক করের পরিমাণ ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্রিটিশ নাগরিক ফরিদ নবীর গাড়িটি পরে ওয়াহিদুর রহমানের কাছ থেকে কিনে নেন মুসা বিন শমসেরের শ্যালক ফারুকুজ্জামান। তবে গাড়িটি ব্যবহার করে আসছিলেন মুসা বিন শমসের।

আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদন বলছে, মামলার সাক্ষী হিসেবে মুসা বিন শমসেরের গাড়িচালক মোসলেম উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মুসার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ডেটকোর উপমহাব্যবস্থাপক এ টি এম মাহবুব মোর্শেদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

মামলার আসামি ব্রিটিশ নাগরিক ফরিদ নবীর ঠিকানা শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তিনি দেশত্যাগের সময় কাগজে-কলমে গাড়িটি হাসিবুর রহমানের কাছে বিক্রি করেছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স থেকে (বিএফআইইউ) থেকে ফরিদ নবীর ব্যাংক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলার আসামি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সহকারী পরিচালক আইয়ুব আনছারীর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অপর আসামি ওয়াহিদুর রহমান বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন।