বাসে উঠলেই ১০ টাকা

যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়ে কথা হয় কয়েকজন চালক ও চালকের সহকারীর সঙ্গে। সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়মের কথাই বলছিলেন তাঁরা।

বাসে উঠতেই ভাড়া নিয়ে চালকের সহকারীর সঙ্গে যাত্রীদের শুরু হয় বাগ্‌বিতণ্ডা। ছবিটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী কলেজগেট এলাকারপ্রথম আলো

যাত্রীবাহী বাসে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ২ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছে বিআরটিএ। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নিয়মে প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার যাত্রীরা। বাসে পা রাখলেই তাঁদের গুনতে হচ্ছে ১০ টাকা। নিম্ন আয়ের মানুষ ও শিক্ষার্থীদের এ টাকা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। সর্বনিম্ন ভাড়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা চান তাঁরা।

রাজধানীর আবদুল্লাহপুর মোড় থেকে ভিআইপি ২৭ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন পোশাক কারখানার শ্রমিক মো. শিপন। যাবেন টঙ্গীর বাটাগেট। বাসের সহকারী ভাড়া চাইলে ৫ টাকা দেন শিপন। কিন্তু সহকারী ১০ টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে বাধে বচসা। শুরু হয় বাগ্‌বিতণ্ডা। একপর্যায়ে বাটাগেটে গিয়ে বাস থেকে নামতে চাইলে পথ আটকে ধরেন সহকারী। এরপর নিরুপায় হয়ে ১০ টাকা দিয়েই বাস থেকে নামতে হয় তাঁকে। আবদুল্লাহপুর থেকে বাটাগেটের দূরত্ব প্রায় ৪০০ মিটার।

* বিআরটিএর বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ২ টাকা ৪৫ পয়সা। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। * সর্বনিম্ন ভাড়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা চান নিম্ন আয়ের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। * সরকারি নিয়মের বাইরে কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ক্ষোভ ঝেড়ে শিপন এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এটা জুলুম। বাসে পা রাখলেই ১০ টাকা দিতে হচ্ছে। অফিসে (কারখানা) আসা-যাওয়ার পথে প্রতিদিনই গাড়ির ড্রাইভার-হেলপারের সঙ্গে ঝগড়া হয়। কিন্তু তা-ও আমাদের কথা কেউ শোনে না।’

শুধু শিপনই নন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও বাসের চালক-সহকারীর মধ্যে প্রতিদিনই ঘটছে এমন ঘটনা। সড়কটুকুর দুই পাশে প্রচুর শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়ি। মানুষের চলাচলে ২৪ ঘণ্টাই ব্যস্ত থাকে। বিআরটিএর বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ২ টাকা ৪৫ পয়সা। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। এই যুক্তি দেখিয়ে বাসে ওঠামাত্রই ১০ টাকা নিয়ে নিচ্ছেন চালকের সহকারীরা।

গাজীপুর জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমেদ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার কম নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে কেউ একবারেই দিতে না পারলে বা অপারগ হলে সেটা ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রে চালকদের ছাড় দেওয়ার সুযোগ আছে। একই কথা জানালেন বিআরটিএ গাজীপুর কার্যালয়ের পরিচালক আবু নাঈম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই। তবে যাত্রী হয়রানির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

আবদুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। সড়কের দুই পাশে প্রচুর শিল্পকারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় রয়েছে অসংখ্য বাস থামার জায়গা (স্টপেজ)। এর মধ্যে টঙ্গী বাজার, বাটাগেট, স্টেশন রোড, কামারপাড়া সড়ক, মিলগেট, চেরাগআলী, পৌরসভা গেট, কলেজগেট, খাঁ পাড়া, গাজীপুরা ২৭, হোসেন মার্কেট, কুনিয়া, বোর্ডবাজারসহ ১৮ থেকে ২০টি স্টপেজ। প্রতিটি স্টপেজের দূরত্ব ১ কিলোমিটার বা তার চেয়ে কম। কিন্তু এক স্টপেজ থেকে অন্য স্টপেজে যেতে দিতে হচ্ছে ১০ টাকা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, টঙ্গী কলেজগেটের শফিউদ্দিন সড়কের সামনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন অনেকে। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু বাস থামছে না। দু-একটি বাসে চালকের সহকারী জানালার ফাঁক দিয়ে ১০ টাকা ভাড়া বলে যাত্রীদের ডাকছেন। এটা শুনে কেউ এগোচ্ছেন, কেউ এগোচ্ছেন না। কিছু বাসে দু-একজন যাত্রী নিচ্ছে, তা-ও চলন্ত অবস্থায়। আবার কিছু বাস শিক্ষার্থী দেখে দরজাই খুলছে না।

কথা হয় কয়েকজন চালকের সঙ্গে। যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়টি এড়িয়ে ভাড়ার বিষয়ে সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়মের কথাই বলছিলেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, অনেক সময় যাত্রীরা ঠিকমতো ভাড়া দিতে চান না। সে জন্য বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াতে হয়।