শাহবাগের শিশুপার্ক খুলতে আরও ৩ বছর, বদলে গেছে নাম

এই ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের দুই পাশে বসানো হবে শিশুপার্কের বিভিন্ন রাইড। ছবিটি গত শনিবার বিকেলে তোলা
মোহাম্মদ মোস্তফা

রাজধানীর শাহবাগে সরকারিভাবে চালু হওয়া দেশের প্রথম শিশুপার্কটি সাড়ে চার বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ। এতে বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু-কিশোরেরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পার্কটির জন্য আরও তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। নামও বদলে গেছে পার্কটির।

ঢাকায় শিশু-কিশোরদের অন্যতম এই বিনোদনকেন্দ্র চালু করতে নতুন একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৬০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের জুন মাসে। এরপর পার্কটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। অর্থাৎ পার্কটির জন্য অপেক্ষার সময় বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে সাত বছর।

সূত্র বলছে, গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে আরও ছয় মাস পর পার্কের মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু হবে। নতুন প্রকল্পে ‘শহীদ জিয়া শিশুপার্ক’ নাম আর থাকছে না; এটির নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক’।

শিশুপার্কের নতুন নাম করপোরেশনের সর্বোচ্চ ফোরাম, তথা বোর্ড সভায় অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের পর বাকি কাজ শেষ করে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করতে মাস ছয়েক সময় লাগতে পারে।
আনিছুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, যান্ত্রিক বিভাগ, ডিএসসিসি

শিশুপার্কটি ২০১৯‍ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। তখন পার্কের সামনে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে এটি বন্ধ ঘোষণা করেছিল ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় শিশুপার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ চলছে। এ জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে।

শিশুপার্কের পুরো এলাকা টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, পার্কের আধুনিকায়নে একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রায় ৬০৪ কোটি টাকার মধ্যে ৪৮৩ কোটি টাকা দেবে সরকার। এই টাকার ৫০ ভাগ অনুদান এবং ৫০ ভাগ ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে। বাকি ১২০ কোটি টাকা দক্ষিণ সিটির তহবিল থেকে খরচ করা হবে।

অনুমোদিত প্রকল্পের ৪১৫ কোটি টাকা খরচ হবে ১৫টি অত্যাধুনিক রাইড কেনা ও স্থাপনে। আর কেন্দ্রীয় শব্দযন্ত্রসহ এলইডি স্ক্রিন বসাতে খরচ হবে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। বাকি টাকা ভেতরের নানা অবকাঠামো উন্নয়নে খরচ করা হবে।

১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের অধীন শিশুপার্কটি স্থাপন করা হয়। পরে ১৫ একর জমিতে অবস্থিত এই পার্ক পরিচালনার জন্য ১৯৮৩ সালে তৎকালীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন

গত শনিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, শিশুপার্কের ১৫ একর জায়গার কিছু অংশে ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। পার্কের যেসব স্থানে পুরোনো রাইড ছিল, সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে টিকিট কাউন্টারের একটি ভবন এখনো রয়েছে। পুরো জায়গার চারপাশে টিন দিয়ে সীমানাপ্রাচীর তৈরি করা হয়েছে।

শিশুপার্কটি ২০১৯‍ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। তখন পার্কের সামনে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে এটি বন্ধ ঘোষণা করেছিল ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় শিশুপার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ চলছে। এ জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের দুই পাশেই শিশুপার্কের বিভিন্ন রাইড বসানো হবে। দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য ভূগর্ভস্থ পার্কিং হয়ে একটি পথ রাখা হয়েছে। ওই পথ হয়ে দর্শনার্থীরা দুই অংশে যাতায়াত করতে পারবে।

এত দিন ধরে শিশুপার্কের আধুনিকায়নের কাজ শুরু না হওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের মূল বরাদ্দের মধ্যে ২৬৫ কোটি টাকা দিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে পার্কের আধুনিকায়নের কাজ করতে বলা হয়েছিল।

আরও পড়ুন

কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শুরু থেকেই বরাদ্দ নিয়ে আপত্তি জানায়। সংস্থাটির পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বলা হয়, শিশুপার্কের বিদ্যমান রাইডগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, নতুন রাইড বসাতে হবে। রাইড বসানো ও পার্কের উন্নয়নে এই বরাদ্দ অপর্যাপ্ত।

এ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চিঠি–চালাচালির পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দক্ষিণ সিটিকে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুপার্কের আধুনিকায়ন করতে বলা হয়। এরপর পার্কের আধুনিকায়নে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের (তৃতীয় পর্যায়) যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তার একটা অংশ পড়েছে আগের শিশুপার্কের জায়গায়। সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন নতুন করে শিশুপার্ক নির্মাণের সময় এই পার্কিংয়ের দুই পাশে রাইডগুলো বসানো হবে। শিশুপার্ক নির্মাণের জন্য শাহবাগ থানাটিও সরানো হবে বলে জানান তাঁরা।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির যান্ত্রিক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিশুপার্কের নতুন নাম করপোরেশনের সর্বোচ্চ ফোরাম, তথা বোর্ড সভায় অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের পর বাকি কাজ শেষ করে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করতে মাস ছয়েক সময় লাগতে পারে।

আনিসুর রহমান আরও বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই তাঁরা পার্কের আধুনিকায়নের কাজ শেষ করবেন।