হায়দার আকবর খান বেঁচে থাকবেন আদর্শ ও বহুমাত্রিক কর্মের মধ্যে

শোকসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ঢাকা, ৩১ মেছবি: প্রথম আলো

হায়দার আকবর খান রনো ছিলেন ইতিহাসের সচেতন সিপাহসালার। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশ থেকে এক নক্ষত্রের পতন হয়েছে। তবে তিনি তাঁর আদর্শ ও বহুমাত্রিক কর্মের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা বিশিষ্ট বাম রাজনীতিক, তাত্ত্বিক ও লেখক হায়দার আকবর খান রনোর শোকসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। আজ শুক্রবার রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে সিপিবি এই শোকসভার আয়োজন করে।

শোকসভা শুরু হয় বিকেল চারটায়। শুরুতেই উদীচীর শিল্পীরা গণসংগীত ও কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল গেয়ে প্রয়াত নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে হায়দার আকবর খান রনোর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আলোচনা শুরুর আগে শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

শোকসভার মঞ্চের মাঝখানে একটি টেবিলে রাখা ছিল হায়দার আকবর খান রনোর প্রতিকৃতি। দুপাশে পুষ্পস্তবক। সামনে গোলাপের পাপড়ি ও মোমবাতির সজ্জা। নেপথ্যে ব্যানার। এই মঞ্চটি নিবেদন করা হয়েছিল প্রয়াত নেতার স্মৃতির উদ্দেশে। হায়দার আকবর খান রনো দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গত ১১ মে ৮২ বছর বয়সে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

বক্তারা কেউ মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন না। সবাই ছিলেন দর্শক আসনে। সঞ্চালক নাম ঘোষণা করলে বক্তার মঞ্চের এক পাশে রাখা মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন। পার্টির সভাপতি অসুস্থ থাকায় শোকসভার সভাপতিত্ব করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহিন রহমান। সঞ্চালনা করেন পার্টির সহসাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ।

আলোচনায় হায়দার আকবর খান রনোর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি, ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে মানবমুক্তি সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অবদান, মত ও কর্মকৌশল নিয়ে মতপার্থক্য, বিভক্তি, মুক্তিযুদ্ধে বাম দলগুলোর ভূমিকা, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে করণীয়সহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে আসে।

সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, রনো ইতিহাসের ধারাবাহিকতা ও তাৎপর্য গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারতেন। ইতিহাসের আলোকে মার্ক্সীয় তত্ত্বের গভীর প্রজ্ঞা ও প্রায়োগিক পদ্ধতি মিলিয়ে সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর মতো এমন সৃজনশীল রাজনীতিক দুর্লভ। তিনি চেয়েছিলেন সব বাম শক্তির ঐক্যের মাধ্যমে মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিতে।

বাসদের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান বলেন, আদর্শের প্রশ্নে রনো যেমন ছিলেন দৃঢ়চিত্ত, অটল, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন খুবই অমায়িক, বিনয়ী, দরদি প্রাণের খোলামেলা একজন মানুষ।

হায়দার আকবর খান রনোর স্মরণে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত শোকসভায় তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ঢাকা, ৩১ মে
ছবি: সংগৃহীত

বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির প্রবীণ নেতা আবদুস সাত্তার বলেন, তাঁর এককালের সহযোদ্ধারা দল পরিবর্তন করে সরকারের সঙ্গে যোগ দিলেও রনো কখনো তাঁর আদর্শ থেকে একচুল বিচ্যুত হননি।

সভাপতি শাহিন রহমান বলেন, সাধারণ মানুষের ওপর শোষক শ্রেণির নির্যাতন, শ্রমজীবী মানুষকে শোষণের অবসান হয়নি। রনো তাঁর রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও লেখার মাধ্যম শাসক শ্রেণির আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্ত মানুষের জন্য মুক্ত সমাজ গঠনের লড়াই করে গেছেন। শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই তাঁর স্মৃতির প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো যাবে।  

পরিবারের পক্ষে প্রয়াত নেতার ভাতিজি অনন্যা লাবণি শোকসভা আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে রনোর রচনা চর্চার মধ্য দিয়ে নবীন প্রজন্মকে শোষণমুক্তির সংগ্রাম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রনো ছিলেন বহুমাত্রিক জীবনের অধিকারী। প্রগতিশীল বাম শক্তির ঐক্যের মধ্য দিয়ে সাম্যবাদী সমাজ গড়ে তোলার সংগ্রামে প্রেরণা হয়ে থাকবেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা অধ্যাপক এম এম আকাশ, রাগীব আহসান মুন্না, হাসান তারিক চৌধুরী, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, আবদুল্লা আল কাফি প্রমুখ।

শোকসভায় ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বর গণহত্যার নিন্দা জানানো হয়। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও হামলা বন্ধের দাবিতে সিপিবি আগামীকাল শনিবার বিকেল চারটায় সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয় সিপিবির পক্ষ থেকে।