‘বিজয়স্তম্ভ’ তো সবাই চেনেন। খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীরা পদক নিয়ে যেখান দাঁড়ান। সেই বিজয়স্তম্ভের এক নম্বর আসনটিতে বসে তিনি পদযুগল রেখেছেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে। মুখে তার বত্রিশ পাটি দন্তবিকশিত হাসি। হাতে বহুল পরিচিত দলীয় প্রতীক তুলে ধরেছেন। কার্টুনটিতে কোনো কিছু লেখা নেই। শুধুই ছবি। তাতেই বার্তা স্পষ্ট। দর্শকেরা যা বোঝার বুঝে নেবেন অনায়াসে।
এমন অনেক কার্টুন ঝুলছে পান্থপথের দৃক গ্যালারির চার দেয়ালে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আজ রোববার এখানে শুরু হলো নির্বাচনী কার্টুনের পাঁচ দিনব্যাপী প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে সরস বিনোদনের ডিজিটাল মাধ্যম ‘ই আরকি’।
আরেকটি কার্টুনে দেখা যাচ্ছে, মুরগির সমাবেশে মাইকে বক্তৃতায় এক শিয়াল বলছে, ‘ক্ষমতায় গিয়া আপনাদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করব।’ আরেক কার্টুনে দেখা যাচ্ছে, ক্রিকেট মাঠে যাঁরা ব্যাট হাতে চার-ছক্কা হাঁকাতেন, তাঁদের হাতে এখন বইঠা। ক্রিকেট ব্যাট ক্রমবিবর্তনে পরিণত হচ্ছে বইঠায়। আরেকটি কার্টুনে হাতে দস্তানার বদলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মুখোশ। তিনি নির্বাচন সম্পর্কে বক্তব্য দিচ্ছেন মাইক্রোফোনে। কার্টুনিস্টরা এমন অনেক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্বাচনকে তুলে এনেছেন।
আজ সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দ্য নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর। তিনি বলেন, প্রদর্শনীর কার্টুনগুলোর মধ্যে বিদ্রূপ আছে আবার স্পষ্ট বার্তাও আছে। তরুণ কার্টুনিস্টরা তাঁদের মেধা ও সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়ে বাস্তবতা তুলে ধরেছেন এসব কার্টুনে। এটা খুব প্রয়োজনীয় ছিল। তবে এখন সময়টা বিরূপ। কেবল একটি ভালো নির্বাচনের জন্য আন্দোলন–সংগ্রাম করলে হবে না। গণতান্ত্রিক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মির্জা বলেন, এমন অনেক কথা আছে যা বলতে চাই, কিন্তু বলতে পারি না। সেসব কথা কার্টুনের মাধ্যমে সুন্দর করে প্রকাশ করা যায়। কার্টুনিস্টরা তা–ই করেছেন। চারপাশে একটা দমবন্ধ করা পরিবেশ। সব সময় নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হচ্ছে। কতটুকু বলা বা লেখা যাবে, কতটুকু সীমানা। এমন পরিস্থিতিতে তরুণেরা সত্য কথাটি সাহসের সঙ্গে তুলে ধরতে পেরেছেন, এটা খুবই আশাপ্রদ ঘটনা।
দৃক গ্যালারির কিউরেটর এ এস এম রেজাউর রহমান বলেন, দৃক গ্যালারি সব সময় সত্য প্রকাশ করতে চায়। কার্টুনিস্টরা তাঁদের কার্টুনের মধ্য দিয়ে প্রকৃত বাস্তবতা তুলে ধরেছেন।
ই আরকি সম্পাদক সিমু নাসের বলেন, আমাদের দেশে রাজনৈতিক কার্টুনের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত কার্টুনিস্টরা কার্টুনের মাধ্যমে বিভিন্ন বার্তা তুলে ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কার্টুনিস্টরা সরস ভঙ্গিতে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
আয়োজকেরা জানান, নির্বাচনী কার্টুনের প্রতিযোগিতা আহ্বান করা হয়েছিল। তাতে প্রায় আড়াই শ কার্টুন জমা পড়ে। সেখান থেকে বাছাই করা ৪০টি কার্টুনসহ ৯৪টি কার্টুন নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে এ প্রদর্শনীর। কার্টুনিস্টদের সংগঠন বাংলাদেশ কার্টুনিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, কার্টুন ফ্যাক্টরি এবং পলিটিক্সের সহায়তায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ২৯ জন প্রবীণ-নবীন কার্টুনিস্টের কার্টুন নিয়ে আয়োজিত এ প্রদর্শনী প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।