পছন্দের শাড়িটির খোঁজে

ঈদের শাড়িটি দেখেশুনে কিনতে পছন্দ করেন ক্রেতারা। বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে বিশ্বরঙ–এর একটি বিপণিবিতানেছবি: আশরাফুল আলম

সম্প্রতি সায়মা বিনতে মাহবুব নামের একজন ফেসবুকে হার ই-ট্রেড নামের উদ্যোক্তাদের গ্রুপে ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য শাড়ি আছে কি না, জানতে চেয়েছেন। এটাও লিখে দিয়েছেন, তিনি যাঁর জন্য কিনবেন, তিনি অভিজাত ও খুব রুচিশীল। তাই তাঁর জন্য বিশেষ কোনো শাড়ি খুঁজছেন তিনি।

বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলের শালিমার নামের দোকানটিতে নতুন বিয়ে করা ছেলের বউয়ের জন্য শাড়ি কিনতে গিয়েছিলেন মাহবুবা হোসেন। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত বউ একটি নীল শাড়ি চেয়েছেন শাশুড়ির কাছে। শালিমার দোকানের তিনজন বিক্রেতা তাঁদের গায়ে জড়িয়ে তিনটি নীল শাড়ি দেখাচ্ছিলেন। তবু মাহবুবা চাইছিলেন আরেকটু হালকা নীলের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত পছন্দের শাড়িটি কিনতে পারলেন তিনি।

ঈদের শাড়ি বলে কথা, যেনতেন হলে হবে না। সিল্ক, হাফসিল্ক, তাঁত ও মসলিন শাড়িগুলোতে স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক, কাঁথার ফোঁড় বা এমব্রয়ডারির কাজ আছে কি না, জারদৌসি, কারচুপি, কাটওয়ার্ক ও প্যাচওয়ার্ক করা শাড়িটি যাঁর জন্য কেনা হবে, তাঁকে মানাবে কি না, অনেক কিছু মিলিয়েই শাড়ি কিনছেন ক্রেতারা।

তবে সরাসরি বিপণিবিতানে শাড়ি কিনতে যাওয়া বেশির ভাগ ক্রেতাকেই শাড়ি পছন্দ করার আগেই পণ্যের দামের ট্যাগটি আড়চোখে দেখে নিতে দেখা গেল। কেননা, এই দাম দেখেই শাড়িটি পছন্দ হলো কি হলো না, তার ভাগ্য নিশ্চিত হবে। ঈদে সেরা শাড়ি কিনতে ক্রেতারা কখনো অনলাইনে ঢুঁ দিচ্ছেন, আবার কখনো বিভিন্ন বিপণিবিতানে ঘুরছেন। কোনো দোকানে পছন্দ হলে সে পছন্দের কথা মনেই রেখে পারলে আরও কয়েকটি দোকান ঘুরছেন ক্রেতারা। তবে বিক্রেতাদের প্রতিবারের মতো এবারও আফসোস—ক্রেতা নেই।

ধানমন্ডির অরচার্ড পয়েন্ট, বসুন্ধরা শপিং মলের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেল, শাড়ির ক্রেতা কম। বুধবার বেলা তিনটার দিকে বসুন্ধরা শপিং মলে শালিমার দোকানে গিয়ে দেখা গেল, চারজন বিক্রেতা বসে আছেন, ক্রেতা নেই। বিক্রেতা আবুল কালাম জানালেন, ১৯৭২ সাল থেকে শালিমার ব্যবসা করছে। এমনও সময় গেছে যখন বিক্রেতারা শাড়ি ভাঁজ করে প্যাকেটে ভরে দিতে গিয়েই হাঁপিয়ে যেতেন। আর এখন মা, খালা, চাচি সবাই সালোয়ার–কামিজ পরেন। শাড়ির দোকানে এসেও সালোয়ার–কামিজ আছে কি না, তা জানতে চান।

আবুল কালাম জানালেন, ক্রেতারা ভারতের শাড়ি বেশি খোঁজ করেন। তাই টাঙ্গাইলের হাফ সিল্ক, বালুচুড়ি শাড়ি কিছু আছে, আর দোকানের ৯৫ শতাংশ শাড়িই ভারত থেকে আনা।

অরচার্ড পয়েন্টে এম ক্রাফটের ব্যবস্থাপক আমান মোল্লা খান ঈদের বেচাকিনি ভালো চলছে বলেই জানালেন। এম ক্রাফটে হাফ সিল্ক, অ্যান্ডি, মসলিনের বিভিন্ন শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। শাড়ির কাপড় ও গুণগতমানের ভিত্তিতে কোনো শাড়ি আড়াই হাজার টাকা, আবার কোনো শাড়ি ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বসুন্ধরা শপিং মলের দেশী দশেও শাড়ির কর্নারের চেয়ে সালোয়ার–কামিজ, শিশুদের পোশাকসহ অন্যান্য কর্নারে বেশি ভিড় দেখা গেল। নগরদোলার ব্যবস্থাপক নুসরাত জাহান জানালেন, শাড়িসহ বিভিন্ন পোশাকে নতুনত্ব বা বৈচিত্র্য কম থাকায় ক্রেতাদের পছন্দের শাড়িটি কেনার জন্য ঘুরতে হচ্ছে বেশি।

ঈদে শুধু নিজের জন্য কেনাকাটা করলে হয় না। উপহারও দিতে হয়। তাই অনেক ক্রেতা হকার্স মার্কেটেও ঢুঁ দিচ্ছেন। আড়াই হাজার টাকা দিয়ে একটি শাড়ি কেনার কথা উল্লেখ করে মোহাম্মদপুরের ফেরদৌসী বেগম জানালেন, এই একই শাড়ি বেনারসিপল্লিসহ অন্য জায়গা থেকে কিনতে গেলে কম করে হলেও চার হাজার টাকা দিতে হতো। তবে হকার্স মার্কেটে কেনাকাটা করার জন্য ক্রেতাকে অভিজ্ঞ হতে হবে। দামাদামি করার কৌশল জানতে হবে। তা না হলে ঠকতে হবে।

শাড়িতে দেশীয় সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে তুলে ধরছে বিশ্বরঙ। বিশ্বরঙের প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লব সাহা বললেন, নারীদের কাছে শাড়ি হলো আবেগের জায়গা। আর ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশ্বরঙ এই শাড়িকে নিয়েই নানান পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে ক্রেতাদের হাতে ভিন্ন কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করছে।

শাড়িটি পরলে কেমন দেখাবে, তা ক্রেতাদের দেখানোর চেষ্টা করছেন একজন বিক্রয়কর্মী। বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বিপণিবিতানে
ছবি: প্রথম আলো

বিপ্লব সাহা ঈদবাজারের ক্রেতাদের কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দিলেন। তিনি বলেন, ক্রেতার বাজেট হয়তো দেড় হাজার টাকা, অথচ তিনি বিপণিবিতানে গিয়ে প্রথমেই পছন্দ করছেন পাঁচ হাজার টাকার শাড়ি। ডিজাইনারদের নকশা করা শাড়ি হলে তার দামটাও বেশি হবে। তাই ক্রেতাকে বাজেট বুঝে পছন্দ ঠিক করতে হবে।

তবে বৈরী আবহাওয়া ও যানজটের কথা ভেবে অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। অনলাইন উদ্যোগ সাভেরিস ক্লোথিং লাইন এবং লালমাটিয়ায় ওলো সই দোকানের উদ্যোক্তা কাকলী তানভীর জানালেন, অন্যান্য শাড়ির পাশাপাশি মণিপুরি শাড়ি এবং সিরাজগঞ্জের তাঁতের শাড়িও ভালো চলছে। এসব শাড়ি ২ হাজার ২৫০ থেকে শুরু করে সাড়ে ৭ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।