আনন্দ আয়োজনে রফিকুন নবীর ৬০ বছরের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

শিল্পী রফিকুন নবীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আনুপূর্বিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে শিল্পকর্ম দেখছেন শিল্পী ও অতিথিরা। গতকাল জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শন কক্ষে
ছবি: আশরাফুল আলম

জন্মদিন মনে করে গুণগ্রাহীরা পুষ্পস্তবক নিয়ে এসেছিলেন বরেণ্য শিল্পী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবীকে শুভেচ্ছা জানাতে। গতকাল রোববার জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী মিলনায়তনে ও ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকে একসঙ্গে শুরু হয়েছে তাঁর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আনুপূর্বিক শিল্পকর্মের প্রদর্শনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে। তবে শিল্পীর জন্মদিন হলো ২৮ নভেম্বর। সেদিনেই জন্মদিনের আলাদা উৎসব হবে। কিন্তু প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেহেতু অনেকেই ফুল এনেছিলেন শিল্পীকে শুভেচ্ছা জানাতে, তাই আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে শুরু হলো শুভেচ্ছা জানানোর পালা।

শিল্পী রফিকুন নবীর ৮০তম জন্মজয়ন্তী উদ্‌যাপন কমিটির আয়োজনে শিল্পীর প্রায় ছয় দশকের শিল্পকর্ম নিয়ে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময় ছিল বিকেল চারটা। প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজন ও অনুরাগীদের সমাগমে জাদুঘর মিলনায়তন মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। তবে সরকারি বিশেষ কাজ থাকায় প্রধান অতিথির আসতে বিলম্ব হবে বলে জানানো হয়েছিল। ফলে এই বাড়তি পাওয়া সময়ে আয়োজনে ঘটল ভিন্নতার সংযোগ।

শিল্পী রফিকুন নবীকে মঞ্চে আসার আহ্বান জানালেন সঞ্চালক শিল্পী আফজাল হোসেন। যাঁরা ফুল এনেছিলেন, তাঁরা এবার একে একে এসে শিল্পীকে শুভেচ্ছা জানালেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। ফুলেল শুভেচ্ছা নিবেদনের একফাঁকে রফিকুন নবীর অনুরোধে তিনি মঞ্চে এসে আবৃত্তি করলেন সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা ‘আমার পরিচয়’।

এরপর সঞ্চালক দর্শকদের জানালেন, তাঁরা শিল্পী রফিকুন নবীর কাছে কিছু জানতে চাইলে প্রশ্ন করতে পারেন। মাইক্রোফোন গেল দর্শকের সারিতে। এক–দুই করে বেশ কয়েকজন প্রশ্ন করলেন, শুভেচ্ছা জানালেন। তাঁদের মধ্যে রফিকুন নবীর চারুকলার সহপাঠী খ্যাতনামা অভিনয়শিল্পী কেরামত মওলাও ছিলেন। শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন, বন্ধুর কৃতিত্বে তিনি গর্বিত। ভাবের আদান–প্রদানে এক অন্য রকম উপভোগ্যতা এল মিলনায়তনের আবহে। এর মধ্যেই এলেন প্রধান অতিথি।

আনুষ্ঠানিক পর্বের স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান, প্রদর্শনীর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানালেন গ্যালারি চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক শিল্পী মনিরুজ্জামান। চারুকলা অনুষদের ডিন ও জন্মজয়ন্তী উদ্‌যাপন পরিষদের সদস্যসচিব শিল্পী নিসার হোসেন বললেন, এই প্রদর্শনী ছাড়াও শিল্পীর জন্মদিন ২৮ নভেম্বর বিকেলে চারুকলা অনুষদে জন্মদিনের উৎসব হবে। এতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আড্ডা, আলোচনা ছাড়াও রফিকুন নবীর প্রায় ৯ হাজার কার্টুন, বইয়ের প্রচ্ছদসহ বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পকর্ম নিয়ে সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনী শুরু হবে। এই দিনে উনসত্তরে ছড়া নামের একটি বইও প্রকাশিত হবে।

প্রধান অতিথি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘শিল্পী রফিকুন নবীর মতো একজন গুণীকে সম্মান জানাতে পেরে আমরা নিজেরাই সম্মানিত হয়েছি। তিনি তাঁর শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে জীবনবোধ ও সমাজসচেতনতা সৃষ্টিতে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে কার্টুনের মাধ্যমে তিনি হাস্যরসাত্মকভাবে সমাজের অসংগতি তুলে ধরেছেন।’

পরে তিনি রফিকুন নবীর কার্টুন–সমগ্রের চার খণ্ডের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও জাতীয় জাদুঘর পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিল্পী রফিকুন নবী তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টিতে সমাজের দিকে তাকিয়ে তার ভেতরের বাস্তবতার অনুসন্ধান করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি সমাজকে নতুন করে গড়ে তোলার বার্তা দিয়েছেন।

রফিকুন নবী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমাদের দেশের যে রাজনীতিক, সামাজিক অবস্থা, তাতে সহজ মসৃণ জীবনযাপন করা যায় না। অনেক ঘটনায় জড়িয়ে জীবন নিয়ে যে উপলব্ধি, সমাজ, প্রকৃতি, সংস্কৃতি নিয়ে চেতনা ও শিক্ষকদের প্রেরণা—সবই তার শিল্পসাধনার পথ চলতে সহায়ক হয়েছে।’

সভাপতির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শিল্পী তাঁর শিল্পকর্মে মানুষের জীবন, প্রকৃতি, সমাজবাস্তবতাসহ বাঙালিত্বকে তুলে এনেছেন। দেশকে সমৃদ্ধ করেছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পী রফিকুন নবী তাঁর একটি শিল্পকর্ম জাতীয় জাদুঘরে প্রদান করেন এবং একটি শিল্পকর্ম প্রধান অতিথিকে উপহার দেন।

জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনকক্ষে এই প্রদর্শনী ৩০ নভেম্বর অবধি প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং গ্যালারি চিত্রকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে। প্রদর্শনীতে দর্শকেরা শিল্পীর ১৯৫৭ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে করা দেড় শতাধিক শিল্পকর্ম দেখার বিরল সুযোগ পাবেন।