ঢামেকের শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ, কর্মবিরতির হুমকি

শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মো. সাজ্জাদ হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের এক ইন্টার্ন (শিক্ষানবিশ) চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। মারধরে জড়িত ব্যক্তিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে সন্দেহ ভুক্তভোগীর।

গতকাল সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় এই মারধরের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তা না হলে লাগাতার কর্মবিরতির হুমকি দিয়েছে মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ (ইচিপ)।

ভুক্তভোগী শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের নাম মো. সাজ্জাদ হোসেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তিনি বর্তমানে একই মেডিকেলে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত।

সাজ্জাদ বলেন, তাঁকে যাঁরা মারধর করেছেন, তিনি তাঁদের চিনতে পারেননি। তবে তাঁদের প্রায় সবার গায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো-সংবলিত টি-শার্ট ছিল।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সাজ্জাদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত নয়টার দিকে তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় যান। সেখানকার রেলিংয়ে বসে বাদাম খাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ কয়েক তরুণ তাঁর কাছে এসে পরিচয় জানতে চান। তিনি ঢাকা মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসক বলে পরিচয় দেন। তাঁরা তাঁর পরিচয়পত্র দেখতে চান।তিনি জানান, এই মুহূর্তে তাঁর সঙ্গে আইডি কার্ড নেই। আর সব সময় তো আর মানুষ আইডি কার্ড নিয়ে চলেও না। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা তাঁকে থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। তিনি প্রতিবাদ করলে তাঁকে আরও মারধর করা হয়।

সাজ্জাদ বলেন, ‘মারধরের একপর্যায়ে আরও চার থেকে পাঁচজন ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা বলতে থাকেন, আমার আচরণভঙ্গিতে সমস্যা আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমি কী করি ইত্যাদি তাঁরা বলেন, আর মারেন। মুখে থাকা মাস্ক তাঁরা ছিঁড়ে ফেলেন। কানের নিচে মারার পর আমি বসে পড়লে তাঁরা আমার মাথায় লাথি মারেন। ৮ থেকে ১০ জন মারধরে অংশ নেন। ঘটনাস্থলে অনেক মানুষ থাকলেও তাঁরা কেউ প্রতিবাদ করেননি।’

সাজ্জাদ জানান, মারধরের শিকার হয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান। তাঁর নাক, কান, চোখ, মুখ, গাল ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
সাজ্জাদ বলেন, মারধরে অংশ নেওয়া তরুণদের প্রায় সবার গায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো–সংবলিত টি-শার্ট ছিল। তাঁদের আচরণ ছিল অস্বাভাবিক।

মারধরের এ ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান সাজ্জাদ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক মারুফ উল আহসান আজ মঙ্গলবার এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রতিবাদলিপিতে তাঁরা বলেছেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে লাগাতার কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁর কাছে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। ঘটনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।