নিজের নামে ডাকাত দল গড়ে অর্থের বিনিময়ে খুন করতেন তিনি

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা এলাকায় ১৫-২০ জনকে নিয়ে একটি ডাকাত দল গড়ে তুলে এর প্রধান হন আক্কাস। ডাকাত দলের নাম দেন আক্কাস বাহিনী। এরপরে অর্থের বিনিময়ে খুনসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়ান। একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে তাঁর। কিন্ত গ্রেপ্তার এড়াতে ছয় বছর ধরে স্ত্রীকে নিয়ে ছদ্মবেশে ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি ইট-ভাটায় কাজ করতেন। গত বুধবার দিবাগত রাতে কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব বলেছে, হত্যা, চুরি ও ডাকাতির অভিযোগে দেশের বিভিন্ন থানায় আক্কাসের বিরুদ্ধে মোট ১২ টি মামলা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আক্কাস মিয়া একজন পেশাদার খুনি ও ডাকাত। নেত্রকোনার খালিয়াজুরী থানায় খুন ও ডাকাতির একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তিনি। ওই মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে ২০১৬ সালে আত্মগোপনে যান। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে কেরানীগঞ্জের একটি ইট-ভাটায় কাজ করতেন।

কর্নেল আরিফ বলেন, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনায় একটি আতঙ্কের নাম ছিল আক্কাস বাহিনী। ডাকাতির কাজে কেউ বাঁধা দিলে আক্কাস তাঁদের খুন করতে দ্বিধা করতেন না। আক্কাস বাহিনী এই তিন জেলায় অর্ধ-শতাধিক বাড়িতে ডাকাতি করে।

২০১১ সালে নেত্রকোনার মনোরঞ্জন সরকারের বাড়িতে ডাকাতি করতে যায় আক্কাস বাহিনী। ডাকাতির সময় মনোরঞ্জনের ছেলে বাঁধা দেওয়ায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নেত্রকোনার খালিয়াজুরী থানায় আক্কাসকে প্রধান আসামি করে ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর একটি মামলা হয়। সেই মামলায় আক্কাসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত। ২০১৬ সালে আক্কাস সুনামগঞ্জের শাল্লায় অর্থের বিনিময়ে মারামারি করতে গিয়ে দুজনকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় শাল্লা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা হয়। এর আগে ২০১৪ সালে আক্কাস তাঁর বাহিনী নিয়ে সুনামগঞ্জের দিরাই এলাকায় অর্থের বিনিময়ে মারামারি করতে গিয়ে ১০ জনকে গুরুতর আহত করেন। এ ঘটনায় দিরাই থানায় আক্কাসের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আক্কাস বলেছেন, অর্থের বিনিময়ে মারামারিও করতেন। তাঁর দলটি আক্কাস বাহিনী নামে পরিচিত। আক্কাস একাধিকবার গ্রেপ্তার হন। তবে জামিনে মুক্ত হয়ে আবার অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। শুরুতে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতেন। শাল্লা থানা এলাকায় তিন খুনের পর শুরু হয় তাঁর পলাতক জীবন। ২০১৬ সালে আক্কাস সুনামগঞ্জ থেকে পালিয়ে রাজধানী ঢাকায় এসে ছদ্মনামে বসবাস করতে শুরু করেন। ঢাকায় কখনো রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। এক পর্যায়ে ঢাকায় একটি ডাকাত দল গড়ে তোলার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তাঁর দলের অধিকাংশ সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ায় ডাকাতি ছেড়ে মাছ বিক্রি শুরু করেন। ২০১৯ সালে নেত্রকোনার খুনসহ ডাকাতি মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়। এর পরে তিনি কেরানীগঞ্জ এলাকায় ইট ভাটায় স্ত্রীর কাছে আশ্রয় নেন। আক্কাস ঘুমানোর সময় সঙ্গে রাখতেন ধারালো ছুরি।

র‍্যাব জানায়, আক্কাসের বিরুদ্ধে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত খুন, ডাকাতি, খুনসহ ডাকাতি, চুরি, মারামারি, লুটপাট, দাঙ্গা ও হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১২টি মামলা আছে। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায়।