ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সাংবাদিককে পেটানোর অভিযোগ

ভুক্তভোগী ওবায়দুর সাঈদ
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ঢাকা কলেজের একটি আবাসিক হলে এক সাংবাদিককে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ নির্যাতনের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা কলেজ প্রশাসন৷

এদিকে এই নির্যাতনের ঘটনার পর ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের ছয়জন কর্মীকে বহিস্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁদের বহিস্কার করা হয়েছে বলে ছাত্রলীগ জানিয়েছে।

ঢাকা কলেজের শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ওই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীর নাম ওবায়দুর সাঈদ। তিনি পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও অনলাইন পোর্টাল বাংলাট্রিবিউনের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি। কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বেও আছেন তিনি।

ওবায়দুর সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের ছাত্রলীগ নেতা রাউফুর রহমান ওরফে সোহেলের নেতৃত্বে তাঁকে মারধর করা হয়। বুকে লাথি, এলোপাতাড়ি চড়থাপ্পড়ের পর শক্তি প্রয়োগ করে তাঁর মুঠোফোনের লক খুলতে বাধ্য করা হয়। পরে ফোন থেকে ‘ডিসিয়ান সংবাদকর্মী’ ও সাংবাদিক সমিতির গ্রুপের সব বার্তা স্ক্রিন রেকর্ড করে নেন রাউফুর। বাধা দিতে গেলে তাঁর রুমমেটদেরও মারতে উদ্যত হন রাউফুর। একপর্যায়ে তাঁকে কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন তিনি। ১৫ ঘণ্টা আটকে রাখা ও নির্যাতনের পর শুক্রবার দুপুরের দিকে তাঁকে অধ্যক্ষের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান। তিনি ফোন ফেরত পেয়েছেন শনিবার দুপুরের পর।

ওবায়দুর জানান, ‘গেস্টরুমে’ না যাওয়ায় গত বুধবার রাতে আরেক ক্যাম্পাস প্রতিবেদক ফয়সাল আহমেদকে ঢাকা কলেজের হলে মারধর করেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একদল কর্মী। এ নিয়ে প্রতিবেদন করায় ছাত্রলীগ নেতা রাউফুর রহমানের নেতৃত্বে তাঁকে মারধর করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ নেতা রাউফুর রহমানের মুঠোফোনে শনিবার রাতে একাধিক কল করা হলে প্রতিবারই নম্বরটি ব্যস্ত পাওয়া যায়।

বর্তমানে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। ২০১৭ সালের পর কলেজটিতে কোনো কমিটি দেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। অভিযুক্ত রাউফুর রহমান কলেজের ২০১১–১২ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী।

শনিবার নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়। কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত এই কর্মিসভায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিককে মারধরের বিষয়ে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ প্রথম আলোকে বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত৷ এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷

জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ওবায়দুর সাঈদের ভাই ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। তিনি এসে তাঁকে নিয়ে গেছেন৷ কিন্তু তখন কেউ কোনো অভিযোগ করেনি৷ এ ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে৷ কমিটিকে বুধবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে৷ তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ ঘটনায় পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছাত্রলীগের ছয় কর্মীকে বহিস্কার

ওবায়দুর সাঈদকে নির্যাতনের ঘটনার পর ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের কর্মী রাউফুর রহমান ওরফে সোহেল, এ বি এম আলামিন, সজিব আহসান, আবরার হোসাইন ওরফে সাগর, সৈয়দ আব্দুল্লাহ শুভ ও ফাহমিদ হাসান ওরফে পলাশকে সংগঠন থেকে বহিস্কারের কথা জানিয়েছে ছাত্রলীগ।

শনিবার দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই ছয়জনকে বহিস্কারের কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই ছয়জনকে বহিস্কার করা হয়েছে।