সাংবাদিক কর্মশালায় বক্তারা: করারোপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বাড়াতে হবে

প্রজ্ঞার আয়োজনে ‘তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাজেট ২০২৩-২৪’ শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: প্রজ্ঞার সৌজন্যে

আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। এতে তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু কমবে, রাজস্ব আয় বাড়বে এবং রাজস্ব আহরণ সহজ হবে।

‘তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাজেট ২০২৩-২৪’ শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা। বুধবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) সহায়তায় তামাকবিরোধী গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) যৌথভাবে কর্মশালাটি আয়োজন করে। এতে প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৯ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। প্রজ্ঞার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

কর্মশালায় জানানো হয়, আইএমএফ ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশকে আসন্ন অর্থবছরেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক পাঁচ শতাংশ অতিরিক্ত কর রাজস্ব আদায় করতে হবে। তামাকের মতো স্বাস্থ্যহানিকর পণ্যের দাম কার্যকরভাবে বাড়িয়ে এই লক্ষ্যমাত্রার উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করা সম্ভব। কর্মশালায় আরও জানানো হয়, অন্যান্য স্তরের তুলনায় নিম্নস্তরে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্বল্প আয়ের তামাক ব্যবহারকারীকে ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করবে। বর্তমানে সিগারেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ৭৫ শতাংশই কম দামি সিগারেটের ভোক্তা এবং এই স্তরে সম্পূরক শুল্কহার মাত্র ৫৭ শতাংশ।

আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধি-সংক্রান্ত যেসব প্রস্তাব কর্মশালায় তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে, নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৪০ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে ৩৫ টাকা ৭৫ পয়সা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক (চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫ শতাংশ) আরোপ করতে হবে। এর পাশাপাশি মধ্যম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ টাকা ৫০ পয়সা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে হবে। উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১১১ থেকে ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪২ থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭ টাকা ৫০ পয়সা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে হবে।

কর্মশালায় জানানো হয়, তামাক কর ও মূল্যবিষয়ক বাজেট প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে সরকারের ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। আর ৪ লাখ ৮৮ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লাখ ৯২ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।

কর্মশালায় সাংবাদিকদের সামনে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (এনসিডি) সৈয়দ মাহফুজুল হক এবং প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক প্রকল্পপ্রধান হাসান শাহরিয়ার। আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর, সিটিএফকে বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আবদুস সালাম, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স আত্মার কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের।