আম, কলা ও কাঁঠাল খায় ‘যুবরাজ’, দাম চাওয়া হচ্ছে ১৮ লাখ টাকা

‘যুবরাজ’ নামের গরুটি গাবতলীর কোরবানির পশুর হাটে এনেছেন নাটোরের নলডাঙা উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। তিনি গরুটির দাম চাইছেন ১৮ লাখ টাকাছবি: প্রথম আলো

যুবরাজের পছন্দের খাবারের তালিকায় আছে আম, কলা ও কাঁঠাল। অন্যান্য খাবারের সঙ্গে এসব খেয়ে সাড়ে তিন বছরে তাঁর বর্তমান ওজন হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কেজি। নাটোরের নলডাঙা উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন যুবরাজকে নিয়ে এসেছেন রাজধানীর গাবতলী কোরবানির পশুর হাটে। দাম হাঁকচ্ছেন ১৮ লাখ টাকা। তবে আগ্রহী ক্রেতা পেলে কিছুটা কম দামে যুবরাজকে বিক্রি করে দেবেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে গাবতলী পশুর হাটে কথা হয় আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। আগের দিন গাবতলীর হাটে যুবরাজকে নিয়ে এসেছেন তিনি। সঙ্গে তাঁর মেয়ে, জামাতা ও নাতিকেও নিয়ে এসেছেন।

গরুর নাম যুবরাজ কেন রেখেছেন, এমন প্রশ্নে আনোয়ার বলেন, তাঁর নাতির নাম যোবায়ের। নাতির নামের সঙ্গে মিল রেখে যুবরাজ রেখেছেন। গাবতলী পশুর হাটে এবারই প্রথম গরু নিয়ে এসেছেন বলে জানান কৃষিকাজে যুক্ত আনোয়ার। যুবরাজকে দিনে তিন থেকে চারবার গোসল করাতে হয় বলেও জানান তিনি।

গমের ভুসি, তিলের খইল ও সবুজ ঘাসের পাশাপাশি যুবরাজকে আম, কলা ও কাঁঠাল খাওয়ানো হয় জানিয়ে আনোয়ার বললেন, পাকা ও কাঁচা দুই ধরনের কাঁঠাল খায় যুবরাজ।

রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত অনেকেই যুবরাজের দাম জানতে চেয়েছেন। গাবতলী পশুর হাটে যুবরাজের মতো বড় আকৃতির বহু গরু ও মহিষ আনা হয়েছে। এসব গরু ও মহিষের ওজন গড়ে এক হাজার কেজির বেশি। বিক্রেতারা ১১ লাখ থেকে শুরু করে ২০ লাখ টাকা দাম চাচ্ছেন।

গাবতলী পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশু বিক্রির প্রথম দিনে অনেক গরু, ছাগল ও মহিষ বিক্রি হচ্ছে। তবে এবার দাম কিছুটা বেশি বলে জানালেন ক্রেতারা। মিরপুরের দারুসসালাম এলাকার বাসিন্দা শামীম পাটোয়ারী এই হাট থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছেন। হাসিল দিয়ে যাওয়ার পথে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, গতবার একই আকৃতির গরুর দাম ছিল বড়জোর দেড় লাখ টাকা। সরকারিভাবে দেশে পর্যাপ্ত গরু আছে, এমনটা বলা হলেও হাটে এসে তা বোঝাই যাচ্ছে না। বিক্রেতারা অনেক বেশি দাম চাচ্ছেন।

উটের দাম চাওয়া হচ্ছে ২৮ লাখ

পাকিস্তান থেকে দুটি উট আমদানি করে গাবতলীর পশুর হাটে এনেছেন ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন। প্রতিটি উটের দাম তিনি ২৬ লাখ থেকে ২৮ লাখ টাকা চাচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, উটের চারপাশে মানুষের ভিড়। অনেকেই ছবি তুলছেন। কেউ ফেসবুকে লাইভ করছেন। তবে সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থানকালে উট কিনতে আগ্রহী কোনো ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি।

পরে আলাপকালে আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর তিনি গাবতলীর হাটে উট নিয়ে আসেন। গত বছরও দুটি উট এনেছিলেন, তা বিক্রিও করেছিলেন। উটের ক্রেতা মূলত কারা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দেশের বড় শিল্পপতি, মন্ত্রী ও বড় ব্যবসায়ীরা উট কিনতে আগ্রহ দেখান।

পাকিস্তান থেকে দুটি উট আমদানি করে গাবতলীর পশুর হাটে এনেছেন এক ব্যবসায়ী
ছবি: প্রথম আলো

উটের পাশাপাশি দুম্বা, ভেড়া ও রংবেরঙের মহিষও তুলেছেন এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আজব সব জিনিস তিনি এ হাটে নিয়ে আসেন। শখের কারণে প্রতিবছর তিনি ব্যতিক্রমী কিছু পশু হাটে তোলেন।

রাজধানীতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ২০টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে এবার। এর মধ্যে গাবতলী পশুর হাট ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একমাত্র স্থায়ী হাট। এ হাটে সারা বছর গরু বেচাকেনা হয়। এর বাইরে আরও আটটি জায়গায় অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এবার অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হয়েছে ১০টি। পাশাপাশি সারুলিয়া বাজারে স্থায়ী হাটেও কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাটগুলোর মধ্যে মেরাদিয়া, হাজারীবাগ ও উত্তরা এলাকায় আরও তিনটি পশুর হাট ঘুরে দেখেছেন প্রতিবেদক। তবে অন্য সব হাটের তুলনায় গাবতলীতে বেশি কোরবানির পশু বিক্রি হতে দেখা গেছে। গরুর দাম প্রায় সব হাটে গত বছরের তুলনায় বেশি। এসব হাটে এসে বেশির ভাগ ক্রেতা দরদাম করছেন। দাম বোঝার চেষ্টা করছেন।

ডেমরা এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষেত্রবিশেষে গত বছরের চেয়ে একই আকৃতির গরুর দাম প্রায় দ্বিগুণ চাওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, গতবারের চেয়ে এবার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি দামে কোরবানির পশু কিনতে হবে।