এ বছর নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ১৪, ১০ জনই মারা গেছেন

আজ রোববার আইইডিসিআর মিলনায়তনে ‘নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকি বিষয়ে অবহিতকরণ সভা’ অনুষ্ঠিত হয়ছবি: প্রথম আলো

চলতি বছর (মার্চ মাস পর্যন্ত) দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ জন। আর আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর হার ৭১ শতাংশ। খেজুরের কাঁচা রস থেকে নিপাহ ভাইরাস মানুষে সংক্রমিত হয়। এখন এ ভাইরাস ছড়ানোর শুরুর সময়। তাই প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে মানুষকে সাবধান থাকতে হবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) আয়োজিত এক সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। আজ রোববার আইইডিসিআর মিলনায়তনে ‘নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকি বিষয়ে অবহিতকরণ সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে কারিগরি সহায়তা দেয় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।

সভায়  আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকিবিষয়ক একটি তথ্যনির্ভর উপস্থাপনা তুলে ধরেন। উপস্থাপনায় তিনি জানান, নিপাহ ভাইরাস একটি মারাত্মক রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস। এ ভাইরাসের বাহক টেরোপাস (ফল আহারি) গোত্রীয় বাদুড়। বাদুড় থেকে মানুষে এই রোগের সংক্রমণ হয়। মানুষের মধ্যে এ সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয় মালয়েশিয়ায় ১৯৯৮ সালে।

তাহমিনা শিরীন বলেন, বাংলাদেশে ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায় নিপাহ ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব চিহ্নিত হয়। এর পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুহার প্রায় ৭০ শতাংশ। বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকি নিরূপণের জন্য আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবি ২০০৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে আটটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিপাহ সার্ভেইল্যান্স কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ বছর থেকে আরও দুই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিপাহ সার্ভেইল্যান্স কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

তাহমিনা শিরীন জানান, বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৩৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ২৪০ জন রোগী মারা গেছেন। বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সাধারণত খেজুরের কাঁচা রস পানের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়। চলতি বছর ২০২৩ সালে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ জন এবং তার মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ১০ জন—রোগী অনুপাতে মৃত্যুহার ৭১ দশমিক ৪২ শতাংশ। বাংলাদেশের বাইরে সাম্প্রতিককালে ভারতের কেরালায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারতে ১০১ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে মারা গেছেন ৭৪ জন। রোগী অনুপাতে মৃত্যুহার প্রায় ৭৩ শতাংশ।

অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘বাংলাদেশে টাঙ্গাইলে ২০০৫ সালে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের সময় গবেষণা করে আমরা দেখেছি, খেজুরের কাঁচা রস থেকে নিপাহ ভাইরাস মানুষে সংক্রমিত হয়। এ ছাড়া বাদুড়ের মুখের লালা বা বাদুড়ের মলমূত্র দ্বারা দূষিত তালের রস বা তাড়ি ও আংশিক খাওয়া ফল মানুষ খেলে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। বাংলাদেশে গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে, মানুষ থেকে মানুষে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে।’

তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কোনোক্রমেই খেজুরের কাঁচা রস না খাওয়ার জন্য জনসাধারণের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। যেকোনো ফল ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে। গাছের নিচে পড়ে থাকা আধা খাওয়া কিংবা ফাটা ফল খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে শিশুদের এ বিষয়ে সতর্ক করতে হবে।’

সভায় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন ও নিপাহ সার্ভিলেন্স বাংলাদেশ প্রোগ্রামের সমন্বয়ক ডা. শারমিন সুলতানা।

সভায় আলোচক ছিলেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা, পরিচালক; স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক এমআইএস ও লাইন ডিরেক্টর (এইচআইএস, ই-হেলথ) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন, পরিচালক, (হসপিটাল অ্যান্ড ক্লিনিক) ডা. আবু হোসাইন মো. মইনুল আহসান, ওয়ান হেলথ বাংলাদেশের ন্যাশনাল কো–অর্ডিনেটর অধ্যাপক ডা. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিম লিড (হেলথ সিকিউরিটি অ্যান্ড ইমার্জেন্সি ডা. এন্থনী ইসোফনি।

সভায় নিপাহবিষয়ক যেকোনো তথ্যের জন্য হটলাইনে (আইইডিসিআর—০১৯০৭৮০১৮৫৬ ও ১০৬৫৫, আইসিডিডিআরবি—০১৩০৪০৬৮৮০০) যোগাযোগ করার আহ্বান জানানো হয়।