গুরুত্ব শুধু কাগজ–কলমে

যানজট, গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও আর্থিক সংকটের কারণে হেঁটে চলা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু ফুটপাতের অবস্থা ভালো নয়।

  • এখন ঢাকায় ২৫ শতাংশ মানুষ হেঁটে চলাচল করেন।

  • সড়ক, খাল ও লেকের পাড়ে হাঁটার পথ নির্মাণের সুপারিশ।

  • ফুটপাতে প্রতিবন্ধকতা দূর করার পাশাপাশি প্রশস্ত করতে হবে।

ঢাকার ফুটপাত
ফাইল ছবি

ঢাকা মহানগরে ২০২৫ সাল নাগাদ প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ হেঁটে চলাচল করবেন। প্রক্রিয়াধীন ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) এমন প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ অবস্থায় ড্যাপে পথচারীবান্ধব নগর গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পথচারীদের চলাচলের সুবিধার্থে প্রতিটি সড়ক, খাল ও লেকের পাড়ে হাঁটার পথ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন রাজধানীতে ২৫ শতাংশ মানুষ হেঁটে চলাচল করেন। চলমান আর্থিক সংকট ও গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির কারণে এই মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কিন্তু সে অনুযায়ী প্রস্তুত হয়নি রাজধানীর ফুটপাত।

ড্যাপের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মাহনগরে অধিকাংশ মানুষ দৈনন্দিন প্রয়োজনে হাঁটা এবং অযান্ত্রিক বাহনের ওপর বেশি নির্ভরশীল।

রাজধানীতে এখন অন্তত ২৫ শতাংশ মানুষ হেঁটে চলাচল করেন। কিন্তু তাঁরা গুরুত্ব পান না। ফুটপাতে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে দুটি সমস্যা হয়। প্রথমত, ফুটপাতের সক্ষমতা কমে যায়, ফুটপাতে হাঁটতে না পারলে মানুষ সড়কে নেমে আসে।
হাদিউজ্জামান, এআরআইয়ের পরিচালক ও গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক

২০১৫ সালে প্রকাশিত ঢাকা নগরের যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী, মাসে ২০ হাজার টাকার কম আয় করেন এমন মানুষের মধ্যে হেঁটে চলাচলের প্রবণতা বেশি। এঁদের ৬০ শতাংশ হেঁটে চলাচল করেন।

জানতে চাইলে নগর–পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা মহানগরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ফুটপাতকে। কারণ, এখানে বেশির ভাগ মানুষের গন্তব্য হয় স্বল্প দূরত্বের বা তিন কিলোমিটারের মধ্যে। কিন্তু ঢাকার ফুটপাত হাঁটার উপযোগী নয়। পার্কিং, হকার, দখল, খানাখন্দসহ ঢাকার ফুটপাত নানা সমস্যা রয়েছে। এরপরও বর্তমান আর্থিক বাস্তবতা, গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও যানজটের কারণে হেঁটে চলা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী ফুটপাতের উন্নতি হয়নি। গত ১০-১২ বছরে যা উন্নতি হয়েছে, তা–ও অভিজাত এলাকায়।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতের বড় একটি অংশ অস্থায়ী দোকান ও হকারদের দখলে। যেসব ফুটপাত ফাঁকা আছে, সেগুলো দিয়েও নির্বিঘ্নে চলা যায় না। মিরপুর রোড ঘুরে দেখা গেছে, টেকনিক্যাল মোড় থেকে ধানমন্ডি আসার পথে ফুটপাতে কিছু দূর পর পর বিদ্যুৎ, টেলিফোন লাইনের খুঁটি এবং ছোট ছোট দোকান।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি গবেষণায়ও ফুটপাতের নানা সমস্যার কথা উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ফুটপাত নিয়ে বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।

গবেষণায় নমুনা হিসেবে মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ২৭ নম্বর মোড় থেকে টেকনিক্যাল মোড় এবং বাড্ডা থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের ফুটপাতকে বেছে নেওয়া হয়। এআরআইয়ের গবেষক দলের সদস্যরা হেঁটে এই দুই সড়কের ফুটপাতের তথ্য সংগ্রহ করেন।

গবেষণায় বলা হয়, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর মোড় থেকে টেকনিক্যাল মোড় পর্যন্ত (ডান পাশ) অংশের দূরত্ব ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ফুটপাতের এই অংশের সঙ্গে ১৩টি সংযোগ সড়ক মিশেছে। এসব সড়কে যানবাহন চলাচলের কারণে ফুটপাত ধরে স্বচ্ছন্দে হাঁটা যায় না। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে। এই ফুটপাতের প্রতি ২৭০ মিটার হাঁটতে পথচারীকে উঁচু-নিচু পথ পেরোতে হয়, যা পথচারীবান্ধব নয়। এ ছাড়া এই ফুটপাতে আছে ১২৯টি র‌্যাম্প, ৯২টি বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি, ৬৫টি ম্যানহোল (উঁচু ঢাকনাসহ) ও ১২টি টেলিফোন বক্স।

এআরআইয়ের পরিচালক ও গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক হাদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীতে এখন অন্তত ২৫ শতাংশ মানুষ হেঁটে চলাচল করেন। কিন্তু তাঁরা গুরুত্ব পান না। ফুটপাতে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে দুটি সমস্যা হয়। প্রথমত, ফুটপাতের সক্ষমতা কমে যায়, ফুটপাতে হাঁটতে না পারলে মানুষ সড়কে নেমে আসে। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হয়। হাঁটার সময় ম্যানহোলের ঢাকনায় আঘাত পাওয়া এমনকি ম্যানহোলে পড়ে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

হাদিউজ্জমান আরও বলেন, ‘কাগজে–কলমে ফুটপাতকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও বাস্তবে আমরা উদাসীন।’