‘গেস্টরুমে’ ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়ে টিএসসিতে অবস্থান, হলে তুললেন প্রাধ্যক্ষ

হলের ‘গেস্টরুমে’ নির্যাতনের শিকার হয়ে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র রিফাত হাওলাদার। ঢাকা, ২২ নভেম্বর
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ‘গেস্টরুমে’ ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে টিএসসিতে তিন ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন এক ছাত্র। পরে অভিভাবকের সহায়তায় তাঁকে হলের কক্ষে তুলে দিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষ। নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

‘গেস্টরুমে’ ধারাবাহিকভাবে নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করে আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করে প্রতিবাদ জানান রিফাত হাওলাদার নামের ওই শিক্ষার্থী। তিনি আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।

রাজু ভাস্কর্যে অবস্থানকালে রিফাত হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘হলের অতিথি কক্ষে ছাত্রলীগের নির্যাতন আমি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারিনি। তাই তারা (ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী) আমাকে হল থেকে বের করে দেয়৷ তারা আমাকে বলেছে, এই সংস্কৃতির (গেস্টরুম) বাইরে যাওয়া যাবে না। এই সপ্তাহের প্রথম দিকে এবং পরে আরেকবার তারা আমাকে গেস্টরুমে মারধর করেছে। পাশাপাশি আমাকে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। হলে একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে৷ এর প্রতিবাদ না হলে এভাবেই চলতে থাকবে। সে জন্য আমি এখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

রিফাতের অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানান ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা–কর্মীরা। এক ছাত্রের সেখানে অবস্থানের খবর পেয়ে দুজন আবাসিক শিক্ষককে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে পাঠান হল প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ মাহবুবুল রহমানও সেখানে যান৷ তিনি ও আবাসিক শিক্ষকেরা রিফাতকে হলে নেওয়ার অনুরোধ করছিলেন৷ কিন্তু রিফাত যেতে রাজি হচ্ছিলেন না৷

হল প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিফাত আসতে চাইছিল না৷ পরে আমি ফোনে তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলি৷ তাঁকে অনুরোধ করি, রিফাতকে হলে এসে সমস্যার কথা বুঝিয়ে বলতে, যাতে তাঁর কথা শুনে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়৷ পরে রিফাত হল কার্যালয়ে আসে। এর মধ্যে আমরা তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও করেছি। পরে রিফাত যে কক্ষে ছিল, সেই কক্ষে থাকতে বলেছি৷ সে কক্ষে উঠেছে।’ তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের আবাসিক হলগুলো ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের নিয়ন্ত্রণে৷ তাদের অধীনেই হলে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের৷ বিশেষ করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ-নিয়ন্ত্রিত ‘গণরুমে’ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রলীগের দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয়।

রিফাত হাওলাদার জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের যে পক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন কক্ষে থাকেন, সেই পক্ষের অন্যতম নেতা হলেন শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রওনক জামান খান৷ অভিযোগের বিষয়ে জানতে সন্ধ্যায় তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’

আরও পড়ুন