রাজধানীতে পাহাড়িদের বৈসাবি উৎসব

পানিতে ফুল ভাসাচ্ছে এক শিশুছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্ষবরণ ও বিদায়ের অনুষ্ঠান বৈসাবির আয়োজন হলো রাজধানীতে। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীতে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এর আয়োজন করে। রাজধানীতে বসবাসরত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে বৈসাবি উৎসবে অংশ নেন। প্রতিবছর এ উৎসবের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

পাহাড়ি জাতিসত্তার সংখ্যা ১৩। এর মধ্যে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের বর্ষবরণ ও বিদায়ের উৎসবের আদ্যক্ষর নিয়ে হয়েছে ‘বৈসাবি’। এর মধ্যে আছে ত্রিপুরাদের ‘বৈসুক’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ আর চাকমাদের ‘বিজু’। তবে অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষও বিষু, বিহু, সাংক্রায়ণ নামে এ উৎসব আয়োজন করেন পাহাড়ে। আজ চাকমাদের ফুল বিজু। ত্রিপুরারা আজকের দিনটিকে বলেন ‘হারি বৈসুক’। আজকের দিনে বিশেষ করে ত্রিপুরা জাতিসত্তার শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারীরা নদীতে ফুল ও প্রদীপ ভাসিয়ে মা গঙ্গার আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। তাঁদের বিশ্বাস, এতে অমঙ্গল দূর হবে, পুরোনো বছরের জরাব্যাধি নাশ হবে। চাকমাদের প্রার্থনার মধ্যেও এই মঙ্গল কামনাই থাকে। এখন নগরজীবনের বাস্তবতায় পাহাড়িদের অনেকেই রাজধানী ছেড়ে এলাকায় যেতে পারেন না। তাই বলে উৎসবকে তো ভুলে থাকা যায় না।

বৈসাবি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজধানীতে এক শোভাযাত্রার আয়োজন করে
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বর্ণিল সাজে সজ্জিত বৈসাবি শোভাযাত্রা সকাল নয়টায় ঢাকার বেইলি রোডে অবস্থিত শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে বেইলি রোড ও রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে প্রদক্ষিণ করে পার্কের লেকের প্রান্তে গিয়ে শেষ হয়। পরে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে রমনা লেকের পানিতে নর-নারী ও শিশুদের ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে এ উৎসবের সমাপ্তি হয়। রাজধানীতে বসবাসরত তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এ আনন্দঘন র‌্যালিতে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করার জন্য সবাই সম্মিলিতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাব। সেখানে কোনো হানাহানি বিদ্বেষ থাকবে না। শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ব এবং সেই একই লক্ষ্যে মূলধারার সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পার্বত্যবাসীর উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে সব সুযোগ-সুবিধা প্রদান অব্যাহত থাকবে।’

২ / ১৯
বৈসাবির শোভাযাত্রায় শিশুদের অংশগ্রহণ ছিল সবার আগেছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সচিব মশিউর রহমান  আরও বলেন, পার্বত্য তিন জেলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করা, ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটানোসহ পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার একটি অন্যতম অংশ হলো এই বৈসাবি উৎসব। এখানে তিন পার্বত্য জেলার ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ফুটে উঠেছে।

মশিউর রহমান আরও বলেন, বৈসাবি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পার্বত্যবাসীদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ, শ্রদ্ধাবোধ ও আস্থা আরও সুদৃঢ় হচ্ছে, যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান শান্তি অব্যাহত থাকবে এবং দেশের উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ জিয়াউল করিম ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি বিধান ত্রিপুরা পিপিএম (বার) উপস্থিত ছিলেন।