২৭ কিলোমিটার সড়কের জন্য শরীয়তপুর পিছিয়ে আছে: পানিসম্পদ উপমন্ত্রী

অনুষ্ঠানে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়
ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা প্রান্ত থেকে জেলা শহর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়কটি আগেই করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম এনামুল হক শামীম।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এনামুল হক শামীম বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ যখন শুরু হয়, মাদারীপুরের রাস্তা যখন শুরু হয়, তখনই (২০১০ সাল) ওই রাস্তাটা করা উচিত ছিল। যেহেতু আমরা ক্ষমতায় ছিলাম, তাই কারও দোষ দেব না। যেকোনো কারণেই হোক, এটার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই সড়কের জন্য যদি বলা হয় যে শরীয়তপুর পিছিয়ে আছে, এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টের ব্যাপার। ইনশা আল্লাহ, নির্বাচনের আগেই এই রাস্তার বেশির ভাগ আমরা করে ফেলতে পারব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শরীয়তপুর জেলার শিক্ষার্থীদের সংগঠন কীর্তিনাশার উদ্যোগে ‘নবীনবরণ, কৃতি সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-২০২২’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এনামুল হক প্রধান অতিথি ছিলেন।

অনুষ্ঠানে এনামুল হক শামীম বলেন, ‘আগে বোঝা দরকার ছিল যে পদ্মা সেতু থেকে শরীয়তপুরে আসার জন্য চার লেনের রাস্তা দরকার। উপমন্ত্রী হওয়ার পর ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ আমি ওই রাস্তা করার জন্য প্রথম ডিও লেটার দিই। পরে ২০২০ সালে এটি একনেকে পাস হয়। ওই সড়কের দরপত্র হয়ে গেছে৷ ভূমি অধিগ্রহণের জন্য একটু সময় লাগছে।’

শরীয়তপুরের উন্নয়নে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী বলেন, ‘শরীয়তপুরের শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি এ মাসেই মন্ত্রিসভায় যাবে, তারপর সংসদে যাবে। ইনশা আল্লাহ, এ বছরের ডিসেম্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শরীয়তপুরে সশরীর নিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করব। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হলেও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদ ও বিভাগ সেখানে থাকবে। আগামী ৫০ বছরেও যেন শরীয়তপুরে বিদ্যুতের ঘাটতি না হয়, সেটাকে লক্ষ্যে রেখে আমরা উপকেন্দ্র করছি।’

এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা পড়াশোনা করবে। কীর্তিনাশাতে যেন আবার পড়াশোনার নাশ না হয়, এটা মাথায় রাখতে হবে। যেকোনো সুবিধা-অসুবিধা-প্রয়োজনে আমাদের বলবে। তোমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, তোমরাই ভবিষ্যৎ শরীয়তপুরের নেতৃত্ব দেবে।’

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শরীয়তপুর সদর থেকে ঢাকা পর্যন্ত বাসে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন এনামুল।

অনুষ্ঠানে কীর্তিনাশার পক্ষ থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ৬৫ জন শিক্ষার্থীকে বরণ করা হয়। এ ছাড়া ৪০তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত শরীয়তপুর জেলার ১৪ জনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক-স্নাতকোত্তরে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করা শরীয়তপুরের শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেয় কীর্তিনাশা। সংবর্ধনা দেওয়া হয় প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলামকেও। এনামুল হক শামীমের মা বেগম আশরাফুন্নেসার নামে প্রতিষ্ঠিত বেগম আশরাফুন্নেসা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ২৫ শিক্ষার্থীকে ছয় মাসমেয়াদি বৃত্তি প্রদান করা হয় এই অনুষ্ঠানে।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম বলেন, ‘যখন শুনি, শরীয়তপুরের ৫০০ ছেলেমেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, আসলে চোখে পানি এসে যায়। আপনারা যা-ই করেন না কেন, পড়াশোনা ঠিক রাখতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। আপনারা আপনাদের জায়গাগুলো ঠিক রাখলে আমরা আমাদের জায়গা থেকে আপনাদের সহযোগিতা করতে পারব। আপনারা পড়াশোনা না করলে এবং সেই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে না পারলে আমরা আমাদের জায়গা থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে পারব না।’

কীর্তিনাশার সভাপতি তানভীর ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আখতার হোসেন, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বি এম ইউসুফ আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান, শরীয়তপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা কামাল, বিএসএমএমইউর সহযোগী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান হাওলাদার, সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক আবুল খায়ের, কীর্তিনাশার সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম খান প্রমুখ।