টিকিট বুকিং দিয়ে গাবতলীতে বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা

গাবতলী বাস টার্মিনাল ফাঁকা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা।
ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

ছোট বোনের বিয়ে কাল শুক্রবার। ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় যাবেন হোসেইন আলী। অবরোধ থাকায় ট্রেনে যেতে প্রথম কমলাপুর স্টেশনে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে সময়মতো যেতে পারেননি। তাই ধরতে পারেননি রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি। পরে গাবতলী যান। সেখানে গিয়ে দেখেন দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে কথা হয় হোসেইন আলীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিনাজপুরে যে গাড়িগুলো যায়, সব কটি কাউন্টারে যোগাযোগ করেছি। কেউ বাস ছাড়ছে না। সবাই বলছে যাত্রী না থাকায় বাস বন্ধ। যাত্রী পেলে বিকেলে গাড়ি ছাড়বে।’

চুয়াডাঙ্আগা নিসুর রহমান লুৎফর রহমান চুয়াডাঙ্গা

বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটের ডাকা তৃতীয় দফা অবরোধের দ্বিতীয় ও শেষ দিন আজ সকালে গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। অবরোধের অন্য দিনের তুলনায় আজ সকাল থেকে টার্মিনালে কিছু যাত্রীর উপস্থিতি দেখা যায়।
সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা ওই টার্মিনালে অপেক্ষা করেন প্রথম আলোর প্রতিবেদক। এ সময়ের ব্যবধানে সেখানে অন্তত ৩০ জন যাত্রীকে টার্মিনালে গিয়ে টিকিটের খোঁজ করতে দেখা গেছে।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে গাবতলীতে অর্ধশতাধিক যাত্রীকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। যাত্রীরা বলেন, তাঁরা বিভিন্ন পরিবহনের বাসের জন্য টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছেন। যাত্রী পাওয়া সাপেক্ষে বিকেল চারটার পর গাড়ি ছাড়া হবে বলে তাঁদের জানানো হয়েছে।

আবদুল লতিফ এসেছেন ঝিনাইদহ থেকে। ফেরার জন্য কাউন্টারে অপেক্ষা করছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে।
ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের একজন আবদুল লতিফ। ঝিনাইদহ থেকে তিনি চিকিৎসার জন্য ঢাকা এসেছিলেন গত মঙ্গলবার (এদিন অবরোধ ছিল না)। ছিলেন মোহাম্মদপুরে ভাইয়ের বাসায়। বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসক দেখিয়েছেন।
আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল আটটার দিকে গাবতলী এসেছি। ঝিনাইদহ যাওয়ার জন্য আটজন যাত্রী হয়েছে। কিন্তু কাউন্টার থেকে বলছে এখন বাস ছাড়বে না। যেতে চাইলে অপেক্ষা করতে বলেছে।’

আবদুল লতিফের ভাষ্য অনুযায়ী, ঝিনাইদহের ওই আটজন যাত্রীর দুজন হলেন মিন্টু মিয়া ও কুলসুম বেগম দম্পতি। স্বামী মিন্টুর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন বলে জানালেন স্ত্রী কুলসুম বেগম। স্বামীর আলসারের চিকিৎসা চলছে।

গাবতলী টার্মিনালে মাগুরার যাত্রী তোয়েবুর মৃধা বাসের অপেক্ষায় বসে আছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায়।
ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

বাসের অপেক্ষায় কুলসুম একটি কাউন্টারের পাশে যাত্রীদের বসার জন্য তৈরি করা সিমেন্টের বেঞ্চে বসে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় আমাদের আত্মীয়স্বজন কেউ নেই। এই কয় দিন হাসপাতালেই ছিলাম। আজকে ছাইড়া দিসে। বাড়ি চইলা যাওয়া ছাড়া তো কোনো উপায় নাই। কিন্তু গাড়ি তো বিকেলের আগে ছাড়ব না কইল।’

সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে গাবতলী টার্মিনালে মাগুরার যাত্রী তোয়েবুর মৃধা, ছেলে তাউসিফ মৃধা, স্ত্রী রেশমা খাতুন, চুয়াডাঙ্গার যাত্রী আনিসুর রহমান ও লুৎফর রহমান, যশোর কেশবপুরের যাত্রী হজরত মোড়লসহ আরও কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। যাত্রীদের বেশির ভাগই টিকিট বুকিং দিয়ে বিকেলের বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

ঝিনাইদহের দুজন যাত্রী মিন্টু মিয়া ও কুলসুম বেগম বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায়
ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

নারায়ণগঞ্জের একটি ইটের ভাটার কর্মী হজরত মোড়ল জানান, ভোরে খবর পেয়েছেন মেয়ে অসুস্থ। তাঁকে দেখতে জরুরিভাবে বাড়ি যাচ্ছেন। কিন্তু গাবতলী এসে দেখেন বাস বন্ধ। প্রাইভেট কারে যেতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভাড়া দেড় হাজার থেকে দুই হাজার চাওয়া হচ্ছে। যেখানে বাসে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় যাওয়া যায়।

চুয়াডাঙ্গার বাস রয়েল এক্সপ্রেসের কাউন্টার মাস্টার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সাড়ে চারটার পর গাড়ি ছাড়ার শিডিউল আছে। বাসটির জন্য বুকিং ও ফুল হয়ে গেছে। তবে যাত্রীদের কাছে অগ্রিম কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। কারণ যাওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকলে যাব। না থাকলে যাব না।’

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় যাবেন হোসেইন আলী। গাবতলীতে বাসের অপেক্ষায় বসে আছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায়
ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

অবরোধের শেষ দিন আজও গাবতলী টার্মিনালে অনেক পরিবহন কোম্পানির টিকিট বিক্রির কাউন্টার বন্ধ দেখা গেছে। কিছু কাউন্টারে রং করার কাজ করতে দেখা যায়। পরিবহনকর্মীদের কেউ কেউ গল্প-আড্ডা দিয়ে কিংবা মুঠোফোনে লুডু খেলা সময় পার করেন।