জন্মের খবর গোপন রাখা বাঘ শাবকটির ফিরে আসা

ব্যাঘ্রশাবক রঙ্গন (বায়ে), ছায়া ও বর্ষাকে একই খাঁচায় রাখা হয়েছে। রোববার, মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায়
ছবি: আশরাফুল আলম

রঙ্গনের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছিল। এমনকি ওর জন্মের খবরই জানতে দেওয়া হয়নি। জন্মের পর থেকে রঙ্গন দাঁড়াতে পারত না। চার পা ব্যাঙের মতো চারদিকে ছড়িয়ে রেখে মাটিতে পড়ে থাকত। মিরপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করেছিল, রঙ্গন হয়তো বাঁচবে না। জন্মের পরপরই ব্যাঘ্রশাবক মারা গেছে, এমন খবর দুর্নাম ছড়াবে, এই ভাবনা থেকে রঙ্গনের জন্মের খবরটি গোপন রাখা হয়।

কিন্তু সেই আশঙ্কা সত্যি হয়নি। চিড়িয়াখানা হাসপাতালে রঙ্গনের চিকিৎসা চলে। ধীরে ধীরে এটি সুস্থ হয়ে ওঠে। এখন রঙ্গনের বয়স এক বছর হতে চলেছে। মাস দুয়েক হতে চলল, রঙ্গনকে প্রদর্শনীর জন্য খাঁচায় রাখা হয়েছে।

মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় বাঘ দম্পতি টগর-বেলির ঘরে গত বছরের ৫ এপ্রিল তিনটি শাবকের আগমন ঘটে। সেই তিন শাবকের একটি রঙ্গন। অসুস্থ রঙ্গনের কথা গোপন রেখে তৎকালীন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, বেলি দুটি ((জুঁই ও জবা) শাবকের জন্ম দিয়েছে।

দুই বোন জুঁই ও জবা এখনো মা বেলির সঙ্গে থাকে। কিন্তু রঙ্গনের কখনো মা-বোনদের সঙ্গে থাকার সুযোগ হয়নি। অসুস্থতার কারণে জন্মের পরপরই ঠাঁই হয় হাসপাতালে। সুস্থ হওয়ার পরও সেখানেই থাকতে হয়েছে তাকে। আর কখনো মায়ের কাছে রঙ্গন ফিরতে পারবে, সেই সম্ভাবনাও কম।

চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা জানান, সেবা ও চিকিৎসার কারণে রঙ্গন একপর্যায়ে সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু তাকে ওর মায়ের কাছে দেওয়া যাচ্ছিল না। কারণ, হঠাৎ করে একটা শাবককে দেওয়া হলে মা বাঘ ভড়কে গিয়ে আঘাত করতে পারে। এ কারণে তাকে হাসপাতালেই রেখে দেওয়া হয়।

মাস দুয়েক আগে হাসপাতাল থেকে রঙ্গনকে (বায়ে) এবং মা শিউলির কাছ থেকে ছায়া ও বর্ষাকে এনে একই খাঁচায় রাখা হয়েছে। রোববার, মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায়
ছবি: আশরাফুল আলম

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হাসপাতালে রঙ্গনকে ছাগলের দুধ খেতে দেওয়া হতো। ওই দুধ বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল। প্রথম দিকে দিনে ছয়বার, তারপর দিনে তিনবার করে দুধ খাওয়ানো হতো। চার মাস বয়স থেকে দুধের পাশাপাশি মাংস দেওয়া শুরু হয়। ছয় মাস থেকে তাকে শুধু মাংস দেওয়া হচ্ছে।

পুরুষ শাবক রঙ্গন এখন থাকে সাড়ে পাঁচ মাসের বড় ছায়া ও বর্ষা নামে আরও দুটি মেয়ে শাবকের সঙ্গে। চিড়িয়াখানার আরেক বাঘ দম্পতি কদম ও শিউলির ঘরে ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর ছায়া ও বর্ষার জন্ম। মাস দুয়েক আগে হাসপাতাল থেকে রঙ্গনকে এবং শিউলির কাছ থেকে ছায়া ও বর্ষাকে এনে একই খাঁচায় রাখা হয়েছে। এই তিন শাবকের মধ্যে বেশ ভাব হয়েছে।

জন্মের সময় চিড়িয়াখানার কেউ ভাবেননি ব্যাঘ্রশাবক রঙ্গন বেঁচে থাকবে। সবার আন্তরিক সেবা, পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাওয়ায় রঙ্গন সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছে। এখন শাবকটিকে খাঁচায় রাখা হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম তালুকদার, পরিচালক, মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা।

রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রঙ্গন দেখতে বড়সড় হয়েছে। বেশ চঞ্চলও সে। নিজেই বেশ কয়েকবার ছায়া-বর্ষার সঙ্গে মিশতে যাচ্ছিল। তারা রঙ্গনকে আশকারাও দিচ্ছিল। তবে রঙ্গন ওদের সঙ্গে শক্তিতে পেরে ওঠে না।

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, জন্মের সময় চিড়িয়াখানার কেউ ভাবেননি রঙ্গন বেঁচে থাকবে। সবার আন্তরিক সেবা, পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাওয়ায় রঙ্গন সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছে। এখন শাবকটিকে আলাদা খাঁচায় রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন

নিয়ন্ত্রণ করা হয় প্রজনন

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় মোট পাঁচটি ব্যাঘ্রশাবকের জন্ম হয়। এর মধ্যে রঙ্গন, ছায়া ও বর্ষাকে এক খাঁচায় রাখা হয়েছে। কিছুদিন পর মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে জুঁই ও জবাকেও আলাদা খাঁচায় রাখা হবে। আরেকটু বড় হলে জুঁই-জবার সঙ্গে একটি পুরুষ বাঘ দেবে কর্তৃপক্ষ। আর প্রজননের জন্য টগর ও বেলি এক খাঁচায় থাকবে।

আরও পড়ুন

জাতীয় চিড়িয়াখানায় বাঘের প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এর কারণ দুটি। প্রথমত, প্রতিটি বাঘের খাওয়ার জন্য দিনে আট কেজির মতো মাংস লাগে; অর্থাৎ একেকটি বাঘের পেছনে দিনে খরচ ছয় হাজার টাকার মতো। গত অর্থবছরে পাঁচটি শাবকের জন্ম হয়েছে। এতে খাবার খরচ অনেকটাই বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, বাঘ রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা বা খাঁচা চিড়িয়াখানায় নেই। তাই বাঘের প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

আরও পড়ুন