ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কারণেই ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা, বলছে থানা-পুলিশ

গতকাল শুক্রবার সাতটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে প্রায় একই সময়ে হামলা এবং ভাঙচুর চালানো হয়
ছবি: সংগৃহীত

ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে ঢাকার মিরপুর ও পল্লবীতে সাতটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে থানা-পুলিশ। তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দাবি করেছে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে।

হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে থানা-পুলিশ ও ডিবি ৩০ জনকে গ্রেপ্তারের পর হামলার কারণ সম্পর্কে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হামলার ঘটনায় পল্লবী থানায় করা মামলায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক। অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন।

হামলার ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন মিরপুর থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কেউ রিকশাচালক আবার কেউ রিকশার মালিক। তবে হামলার কারণ সম্পর্কে এখনই বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে নয়জনকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে ডিবি। সেখানে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ দাবি করেন, কারও কারও ইন্ধনে পুলিশের মনোবল ভেঙে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানাতে রাজি হননি ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ।

শুক্রবার সকালে হঠাৎ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশার চালকেরা ট্রাফিক পুলিশের ওপর চড়াও হন। তাঁরা রিকশা ও ভ্যানে করে ইটপাটকেল নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের বক্স ভাঙচুর করেন। এ সময় তাঁরা মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে একজন কনস্টেবল মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেন। এ ঘটনায় মিরপুর থানায় একটি এবং পল্লবী থানায় একটি মামলা হয়। মিরপুর থানার মামলায় ৪০-৫০ জন এবং পল্লবী থানায় ৫০-১০০ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে মামলা করা হয়।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার পুলিশের ওপর হামলার পর মিরপুর ও পল্লবী এলাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশাচালকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিশেষ করে দুই থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তাঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্কও বিরাজ করছে। এ কারণে শনিবার সকালে ব্যাটারিচালিত রিকশা তেমন চলেনি। তবে বেলা বাড়ার পর অটোরিকশার পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। তবে একাধিক চালক জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।

আরও পড়ুন

ডিবির সংবাদ সম্মেলন

ডিবির সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, হঠাৎ করেই এই হামলার ঘটনা ঘটেনি। পরিকল্পনা করেই সকালে বিভিন্ন ট্রাফিক পুলিশ বক্সে এই হামলা করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের স্বপ্রণোদিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছিল ট্রাফিক পুলিশ। হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সড়ক ও মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশা চলাচল করতে পারবে না। পঙ্গু রিকশাচালককে মারধরের অজুহাত দাঁড় করিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। অথচ এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যাঁরা এ কাজ করেছেন, তাঁদের রিকশা নেই। তবে এর পেছনে মোটর ও মোটর পার্টস ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও ইন্ধন রয়েছে।

আরও পড়ুন

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, এ ঘটনার সঙ্গে কয়েকজন বড় ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এসব বড় ভাইয়ের নাম-পরিচয় তিনি বলেননি। হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা বরিশাল, ফরিদপুর, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে গেছেন বলেও জানান তিনি।