ঢাকার এক কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে রাস্তায় শিক্ষকেরা

বিভিন্ন অভিযোগে শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন শিক্ষকেরা। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ২ অক্টোবর
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর টিকাটুলীতে অবস্থিত শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেছেন শিক্ষকেরা। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে নিতে শিক্ষকদের ভয় দেখানো ও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এক মানববন্ধন থেকে এসব অভিযোগ করেন। তাঁরা বলেন, দুই বছর আগে রিয়াজ উদ্দিন শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন।

মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহকারী শিক্ষক আকলিমা আক্তার। তাতে বলা হয়, রিয়াজ উদ্দিন দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের সমর্থন নিয়ে নিজের একটি বলয় তৈরি করেন এবং পছন্দের একজন অধ্যক্ষও নিয়োগ দেন। রিয়াজ উদ্দিন বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ করেন। তিনি কোনো অডিট (নিরীক্ষা) করেননি। এ ছাড়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণ করতেন তিনি।

রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে শিক্ষকদের অনেকে বিভিন্ন জায়গায় স্মারকলিপি দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পদত্যাগ করেন। শিক্ষকদের অভিযোগ, পদত্যাগ করে তিনি শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে একটি পাল্টা–অভিযোগ দেন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির সদস্যরা রিয়াজ উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ। গণমাধ্যম সূত্রে শিক্ষকেরা জেনেছেন, তদন্ত কমিটি রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়নি।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সৈয়দা মেহেনাজ প্রথম আলোকে বলেন, রিয়াজ উদ্দিন সব সময় মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের ক্ষমতা দেখাতেন। উচ্চপর্যায়ে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে, অভিযোগ দিলেও কিছু হবে না। এই আশঙ্কা থেকে তাঁরা বোর্ড বা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেননি। তবে প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এরপর শিক্ষকদের অভিযোগ তুলে নিতে নানা ভয়–ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় মানববন্ধনে। শিক্ষকেরা জানান, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের সামনে রিয়াজ উদ্দিন তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে দুজন শিক্ষককে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া আরও একজন শিক্ষকের স্বামীকে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করেন।

ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে শিক্ষকেরা গত ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়ারী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে তা গ্রহণ করা হয়নি বলে মানববন্ধনে অভিযোগ করেন শিক্ষকেরা। এ বিষয়ে ওয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। অভিযোগ যে কেউই দিতে পারেন। যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের কাছে প্রমাণ থাকলে সেটা দেখাক এবং প্রমাণিত হলে তিনি মেনে নেবেন বলে জানান।

রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে শিক্ষকেরা চাকরি ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন মানববন্ধনে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ চান। এ সময় বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হামিদা আক্তার, সহকারী শিক্ষক আলেয়া আক্তার ও রেখা মণ্ডল দিনা।

মানববন্ধন শেষে শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে ফিরে গেলে তাঁদের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. তোফায়েল আহমেদ। সহকারী শিক্ষক সৈয়দা মেহেনাজ প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ে এইচএসসির প্রাকটিক্যাল (ব্যবহারিক) পরীক্ষা চলছে। তাই কোনো ক্লাস হয় না। তাঁরা স্বাক্ষর করে চলে আসেন। আজও মানববন্ধন শেষ করে স্বাক্ষর করতে গেলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তা করতে দেননি।

যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. তোফায়েল আহমেদ এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডে বা জেলা প্রশাসনে কথা বলার পরামর্শ দেন।