দেশে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজউক, অভিযানের নামে চলছে চাঁদাবাজি

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতারা অভিযানের নামে সরকারি সংস্থাগুলো চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেনছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর বেইলি রোডে রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের পর অভিযানের নামে সরকারি সংস্থাগুলো চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।

সংগঠনটির নেতারা বলছেন, অভিযানের নামে রেস্তোরাঁ মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে যে সংস্থা যেভাবে পারছে চাঁদাবাজি করছে৷ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা বলে অভিযোগ করেন নেতারা।

আজ সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতারা এসব কথা বলেন। বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক অভিযানের নামে রেস্তোরাঁ সেক্টরে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টির প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তাতে বলা হয়, সরকারি বিধি অনুযায়ী, কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হলে কমপক্ষে ছয় মাস আগে নোটিশ দিতে হয়। বিনা নোটিশে এভাবে ভাঙচুর করে, বন্ধ করে দিচ্ছে রেস্তোরাঁ। রাজউকের এফ-১ ও এফ-২–এর নামে যে নৈরাজ্য চলছে, তা কোনোভাবেই কাম্য না। আমরা জানি, কমার্শিয়াল স্পেসে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করা যাবে। রাজউকের ২০২২-২০৩৫ সাল পর্যন্ত ড্যাপেও ব্যবসায়ীদের ভবনের মিশ্র ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সরকারি পদ্ধতির জটিলতার কারণে লাইসেন্স নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও জটিল বিষয়। লাইসেন্স গ্রহণের প্রক্রিয়া জটিল করে অসাধু উপায়ে নিতে বাধ্য করা হয়। দেশের সব রেস্তোরাঁ সেবাকে একটি সংস্থার অধীনে এনে লাইসেন্স প্রদান করার দাবি জানায় বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। লাইসেন্স করতে হলে এমন কিছু নথি চাওয়া হয়, যা বাস্তবসম্মত নয় বা প্রদান করাও সম্ভব নয় বলেন তাঁরা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইমরান হাসান বলেন, ‘সরকারি সংস্থার অব্যবস্থাপনার দায় কেন ব্যবসায়ীরা নেবে? নিবন্ধন নেওয়ার পুরো ব্যবস্থা এমন করা হয়েছে, ব্যবসায়ীদের প্রতি পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়৷ ফায়ারের কাছে গেলে বলে পরিবেশের ছাড়পত্র দেন, পরিবেশে গেলে বলে রাজউকের অনুমতি দেন, রাজউকে বলে কলকারখানার সনদ দেন।’

অভিযানের নামে সরকারি সংস্থাগুলো সন্ত্রাসী কায়দায় রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ইমরান হাসান। তিনি বলেন, ‘অভিযানের নামে মালিকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। যে যেভাবে পারছে চাঁদাবাজি করছে।’

রাজউকের ব্যর্থতার কারণে ঢাকা জঞ্জালের নগরীতে পরিণত হয়েছে দাবি করে ইমরান হাসান বলেন, রাজউক দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা। তাদের ব্যর্থতার দায় ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে চাপালে হবে না। যারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স দিলেন, বাণিজ্যিক হারে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল নিচ্ছেন। পাঁচ বছর ধরে ব্যবসা চলছে, এত দিন দেখলেন না? এখন কোনো নোটিশ না দিয়ে ভেঙে ফেলছেন, বন্ধ করছেন। এটা অমানবিক।’

সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি কয়েকটি দাবি জানায়। তার মধ্যে রয়েছে, অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা, টাস্কফোর্স নির্দিষ্ট একটি এসওপি তৈরি করবে। দেশের সব রেস্তোরাঁ সেবাকে একটি সংস্থার অধীনে এনে লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। পবিত্র রমজান মাসে সিলগালা নাটক বন্ধ করতে হবে। তা না হলে ২০ মার্চ মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর সমীপে স্মারকলিপি প্রদান করবে সমিতি। ধারাবাহিকভাবে প্রতীকী হিসেবে এক দিনের জন্য সারা দেশে রেস্তোরাঁ বন্ধের কর্মসূচি দেবে সমিতি।