সাংবাদিকতা নারীবান্ধব নয়

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম
ছবি: প্রথম আলো

সমাজে নারীরা সম-অধিকার পাচ্ছেন না। সাংবাদিকতাও নারীবান্ধব হতে পারেনি। পেশাটিতে নেই যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা। সুশাসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সুষম সমাজ তৈরি করতে হলে সাংবাদিকতায় নারীদের আনতে হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে অতিথিরা এসব কথা বলেন।

ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, সমতাহীন সমাজ কখনো এগোতে পারে না। যেখানে নারীরা সম-অধিকার পাচ্ছেন না, সেটা কখনো সুষম, গণতান্ত্রিক সমাজ হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তির বিপ্লবে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। কোনো সাংবাদিক নিয়োগে তিনি ডিজিটালি কতটা এগিয়ে, সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হয়। সাংবাদিকতার ধরনও পাল্টেছে। সাংবাদিকতার যে পরিবর্তন, তার সঙ্গে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।

নারীরা চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন, কিন্তু সাংবাদিকতাকে কাজের জায়গা মনে করছেন না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন। তিনি বলেন, নারীরা সাংবাদিকতার শিক্ষায়ও এখন কম আসছেন। আবার সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করে তাঁরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। কারণ, সাংবাদিকতায় সেই সম্মান নেই, সুযোগ-সুবিধা নেই। নারীরা এখন অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ করছেন, কিন্তু সাংবাদিকতায় যাচ্ছেন না। আবার গেলেও সেখানে থাকছেন না।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো নারী সাংবাদিকদের কাজ করা সুযোগ করে দিচ্ছে উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, এমন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই যে নারীরা পারেন না। ভালো সাংবাদিকতা চাইলে এবং প্রতিভাবানদের নিয়ে আসতে চাইলে সমস্যা চিহ্নিত করে কাজ করা প্রয়োজন বলে জানান এই অধ্যাপক।

ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, এখনো সাংবাদিকতা নারীবান্ধব হয়ে ওঠেনি। কোথায় গলদ, তা খুঁজে বের করতে হবে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে হবে। তিনি কোটার চাইতে মেধা ও যোগ্যতার ওপর জোর দেন।

সাংবাদিকতার জন্যই এখানে নারীর অংশগ্রহণ জরুরি উল্লেখ করে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক বলেন, সমাজের পরিবর্তনে এবং সুশাসনের জন্যও নারী সাংবাদিক প্রয়োজন। প্রত্যাশা অনুযায়ী নারী সাংবাদিকের সংখ্যা বাড়েনি।

তিনি বেশ কিছু দাবির কথা তুলে ধরেন। যেমন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৩০ শতাংশ নারী সাংবাদিক রাখা, বিশেষ প্রশিক্ষণ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সেল গঠন, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র তৈরি, সরকারি নীতি অনুযায়ী প্রসূতি ছুটি দেওয়া।

ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সাংবাদিক মুনিমা সুলতানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউএনবি সম্পাদক ফরিদ হোসেন, বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুকসহ প্রমুখ। এ ছাড়া সংগীত পরিবেশন করেন শামা রহমান।