অনলাইনের মাধ্যমে বই আরও সহজলভ্য হয়েছে: আবুল কাসেম ফজলুল হক
বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, যখন রেডিও–টেলিভিশন আবিষ্কার হয়েছিল, তখন অনেকে বলেছিলেন, বইয়ের গুরুত্ব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সে রকম হয়নি। বরং অনলাইনের মাধ্যমে বই আমাদের কাছে আরও সহজলভ্য হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উদ্যোগে ঢাকা মহানগরের স্কুল পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের বইপড়া কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির সহযোগিতায় রয়েছে গ্রামীণফোন। অনুষ্ঠানের আয়োজক বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।
বই একজন মানুষকে নতুন করে গঠন করে—এ কথা উল্লেখ করে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, বই তার পাঠককে কখনো অভিভূত করে, কখনো হতাশ আবার কখনো উজ্জীবিত করে। এর মধ্য দিয়ে পাঠক ব্যতিক্রম সব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কিন্তু নিজেকে গড়তে অবশ্যই বই পড়তে হবে।
সব লেখক মহৎ উদ্দেশ্যে বই লেখেন না, উল্লেখ করে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের সতর্কতার সঙ্গে ভালো ও মন্দ লেখার পার্থক্য বুঝতে হবে। ভালো বই বারবার পড়া যায়। ভালো বই একেক সময় একেক দৃশ্য তার পাঠকের সামনে তুলে ধরে। কিন্তু খারাপ বই বারবার পড়ার সুযোগ থাকে না। পাঠককে বুঝতে হবে, লেখক যেটা বলেছেন সেটাই শেষ কথা নয়।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘তোমরা বই পড়ে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে অন্যের অভিজ্ঞতা মেলাবে। যেখান থেকে নিজেকে একজন পরিশুদ্ধ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায়। আমি চাই, আজকে যারা উপস্থিত হয়েছে, তারা সবাই নিজের জীবনে উন্নতি করুক।’
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘দেশে প্রচলিত একটা বক্তব্য আছে যে ছেলেমেয়েরা পড়তে চায় না। আমি এই বক্তব্যকে সঠিক মনে করি না। বরং ছোটদের পড়ার জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা দেওয়া হয় না। দেশের স্কুল ও কলেজে লাইব্রেরি স্থাপন করা জরুরি। যেই লাইব্রেরি শ্রেণিকক্ষের অংশ হিসেবে থাকবে।’
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এমন স্কুলের সংখ্যা খুব বেশি নয়, যেখানে ক্লাসের অংশ হিসেবে লাইব্রেরি রাখা হয়। ছাত্রছাত্রীরা যদি বই পড়তে না পারে তাহলে তাদের সৃষ্টিশীলতা বিকাশ পাবে না।
অনলাইন ও ইন্টারনেট বইপড়ার সুযোগকে আরও অবারিত করেছে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, কেউ চাইলে এখন ঘরে বসেই বইয়ের রাজ্যে ঘুরে বেড়াতে পারে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষকে শুনতে পারে। ভাবের বিনিময় করতে পারে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচিকে আরও এগিয়ে নিতে সরকারের কাছে দাবি জানান আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি থাকবে বইপড়ার এই কর্মসূচি যেন আরও অবারিত করা হয়। কোনো সমস্যা যাতে সৃষ্টি না হয়, বরং আরও বেশি সহযোগিতা প্রদান করা হয়। অভিভাবক ও শিক্ষকদেরও সেই সুযোগ তৈরিতে দৃষ্টি রাখতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাবেক ট্রাস্টি আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, খন্দকার মো. আসাদুজ্জামান এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন।
শুক্রবার সকালে এই অনুষ্ঠানের শুরু হয়। শুক্রবারের প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী নকী, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ ও অভিনেতা খাইরুল আলম সবুজ।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগরের ৬৫টি স্কুলের ২০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার আটটি পর্বে পুরস্কার দেওয়া হবে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের দেশভিত্তিক এই বইপড়া কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আড়াই লাখ শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।