শিল্পকর্মে নয়নাভিরাম প্রকৃতি ও মানুষের গল্প

শিল্পী সাঈদ খন্দকারের একক চিত্রকলা প্রদর্শনীতে শিল্পকর্ম দেখছেন দর্শকেরা। প্রদর্শনী চলছে ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকে
ছবি: সংগৃহীত

শহর থেকে গ্রাম, স্মৃতি থেকে বাস্তবতার বয়ানের সঙ্গে নয়নাভিরাম রঙে-রেখায় উদ্ভাসিত বাংলাদেশর নিসর্গ। শিল্পী সাঈদ খন্দকারের প্রায় ৭০টি শিল্পকর্মে জীবনের যে গল্প উঠে এসেছে, তা সবারই বেশ চেনা। ‘অনন্ত নীরবতা’ নামে তাঁর ষষ্ঠ একক চিত্রকলা প্রদর্শনী চলছে ধানমন্ডি ৪ নম্বর সড়কের গ্যালারি চিত্রকে।

সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর ১২ আগস্ট প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য শিল্পী ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবী। প্রদর্শনীর অধিকাংশ ছবিই ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকে আঁকা আর কিছু আছে জলরঙের কাজ। প্রদর্শনী ২৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।

বড় আকারের দুটি প্রতিকৃতি আছে প্রদর্শনীতে। এর একটি নিষ্পাপ এক শিশুর। পাখির ঝাঁক ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে নেপথ্যের আলোকিত পটভূমিতে। এই ছবির নামেই প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘অনন্ত নীরবতা’। অকালেই চির নীরব করে দেওয়া হয়েছিল শেখ রাসেল নামের শিশুটিকে। প্রদর্শনীটি তাকেই উৎসর্গ করা। অপর প্রতিকৃতিটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।

এ ছাড়া প্রদর্শনীর অপর ছবিগুলোতে উঠে এসেছে নাগরিক দৃশ্য, ভূ-প্রকৃতি, গ্রামীণ জীবনযাপন আর স্মৃতিমেদুর নানা বিষয়। কাকের ঝাঁক বসে আছে ইলেকট্রিক তারে। সবুজ বনভূমির পটভূমিতে উড়ে চলা বক, বেদে নৌকা, শৈশবে পুকুরে ছিপ ফেলে মাছ ধরা, চাকা নিয়ে ছুটে চালা শিশু, সমুদ্রের তটে সাম্পানের সারি। আরও আছে দোতারা বাজিয়ে গান করা বাউল দম্পতি। একাকী বসে থাকা চড়ুই পাখি। মহিষের পিঠে চড়ে বাঁশিতে সুরে তুলতে নিমগ্ন কিশোর। মহিষ অবশ্য নানাভাবে অনেকবার ঘুরে ঘুরে এসেছে তাঁর ছবিতে। পানিতে গা ডুবিয়ে থাকা মহিষ, গোধূলিতে ঘরে  ফিরছে মহিষদের দল, মাঠে চরে বেড়াচ্ছে মহিষের পাল—এমন একের পর এক দৃশ্যে ছায়াময়, মায়াময়, শ্যামল বাংলাকে তুলে ধরেছেন শিল্পী সাঈদ খন্দকার। মূলত বাস্তব রীতিতে আঁকা। রেখার চলন, রঙের প্রয়োগ আর বিষয়বস্তুর বিন্যাসে নিজস্ব ভঙ্গি রয়েছে তাঁর, যা ছবিগুলোকে দৃষ্টিসুখকর করেছে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে অঙ্কন ও চিত্রণ বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন সাঈদ খন্দকার। তবে আরও একটি স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্থাপত্য বিষয়ে। স্থপতি হিসেবে নিজের একটি প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনভাবে পেশাগত কাজ করছেন। আর ছবি আঁকছেন মনের আবেগ, অনুভব আর সৃজনশীলতার টানে। দেশে চারটি এবং জার্মানি ও বেলজিয়ামে তাঁর দুটি একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী হয়েছে। দেশ-বিদেশে অনেক দলবদ্ধ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। লন্ডনের কমনওয়েলথ তরুণ শিল্পী পুরস্কার, নয়াদিল্লির শংকর আন্তর্জাতিক পুরস্কার, ঢাকার গ্যালারি টোনের মিনিয়েচার পুরস্কারসহ বেশ পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন তিনি।