ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিকভাবে কাজ করছে সরকার: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় ককাসের’ গোলটেবিল বৈঠক হয় জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য ক্লাবের মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক নাগরিকের সম–অধিকার রক্ষা করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে কারণে সরকার দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিকভাবে কাজ করছে। কেউ সহিংসতার মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে গেলে তা ঠিক হবে না। ন্যায়সংগত দাবি আদায়ের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা উচিত।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় ককাসের’ গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেছেন মন্ত্রী। জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য ক্লাবের মিলনায়তনে ‘বহুত্ববাদ, বৈচিত্র্য ও আদিবাসী অধিকার’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। দিবসটি সামনে রেখে এই আয়োজন করা হয়।

প্রধান অতিথি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ছিল সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের একার নয়। চুক্তিতে যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, সরকারি কর্মকর্তা সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে। চুক্তি অনুসারে অনেক কাজ হয়েছে।

যেটুকু হয়নি, তার জন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই উদ্যোগ নিতে হবে। সহিংসতা কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না। সমস্যা জিইয়ে না রেখে তা সমাধানের জন্য সব পক্ষকে কাজ করতে হবে।’

ককাসের আহ্বায়ক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। গোলটেবিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, সমাজে বহুত্ববাদের ধারণা থেকে দূরে সরে গিয়ে একক কর্তৃত্বের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে তার ফল ভালো হবে না। তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংসদে দুবার বিল উত্থাপিত হলেও তা পাস হয়নি। তবে এই আইন পাস হওয়া প্রয়োজন। আবার এই বিল উত্থাপন করা হবে।’

সংসদ সদস্য র আ ম ওবায়দুল মোক্তাদির বলেন, পার্বত্য এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে সেই এলাকার জনগণের জীবন, সংস্কৃতি ও জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

সংসদ সদস্য আ ক ম ফজলুল হক সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ভূমির অধিকার রক্ষায় পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সংসদ সদস্য আরোমা দত্ত বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা যেন সরকারি দপ্তরে তাঁদের সমস্যা–সংকটের কথা তুলে ধরতে পারেন, সে জন্য অন্তত উপজেলা প্রশাসন পর্যায়ে একটি সেল বা বিশেষ কোনো ব্যবস্থা থাকা দরকার।’

গোলটেবিল বৈঠকের ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ককাসের সমন্বয়ক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। তিনি বলেন, ‘বহুত্ববাদ ও বৈচিত্র্য ধারণ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষকে নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হবে। কারও অস্তিত্ব বিলীন করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা যাবে না।’

আলোচনায় আরও অংশ নেন ইউএনডিপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রসেনজিত চাকমা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গণেশ মাঝি, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান। পরে মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পীযূষ বর্মণ, হেলেনা তালাং, নমিতা চাকমা, রমেশ কোচ, সুভাষ চন্দ্র রাজবংশী ও দিলীপ রবিদাস। সঞ্চালনা করেন গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভের সাধারণ সম্পাদক জান্নাত-এ-ফেরদৌসী।